বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তবে বাংলাদেশে নতুন নতুন আইন প্রনয়নের কারণে অনেক দেশ বিনিয়োগ বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তেমনই ইঙ্গিত দিলেন। সেই দিক থেকে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে।
ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মের প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে।
রোববার ‘বাংলাদেশে অনলাইন ফ্রিডম অ্যান্ড বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় রাষ্ট্রদূত এসব বিষয়ে দেশটির উদ্বেগের কথা জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা আমেরিকান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি যে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এবং এখানে তাদের ব্যবসা বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু একই সময়ে, আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশ”ঙ্কা শুনতে পাই যে প্রস্তাবিত নতুন আইন ও প্রবিধান তাদের জন্য এখানে ব্যবসা করা আরও কঠিন করে তুলবে।
পিটার হাস বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছাড়তে বাধ্য হতে পারে, যদি ডাটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তা কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্তে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়।”
একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। এর পরিণতি বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দুই হাজারের বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসার বাইরে যেতে হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিই। তাই আমরা সরাসরি সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি।
পিটার হাস বলেছেন যে অনলাইন উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে হওয়া দরকার। আর সেই প্রেক্ষাপটে পরবর্তী যে বিষয়টি আলোচনায় আসে তা হল: মানবাধিকার। ইউনাইটেড স্টেটস ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তু পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটি কোনো সহজ কাজ নয়। তবে, তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে খসড়া আইন দেখেছি সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন অনলাইন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়াটি একটি স্বাধীন ডেটা তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষের জন্য প্রদান করে না এবং আইনটিতে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।” যাইহোক, আইন প্রণয়নের সময় প্রতিটি দেশকে অবশ্যই তাদের স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, তবে আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আইন প্রণয়নে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার আহ্বান জানাই। অনলাইন স্পিচ এবং ডেটা সুরক্ষিত করা সহজ কাজ নয়। এটি একটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। আর সেজন্যই আমরা এই আলোচনা করছি।
প্রসংগত, বাংলাদেশ তার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, অনুকূল জনসংখ্যা এবং ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজারের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। দেশটি টেক্সটাইল এবং পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং টেলিযোগাযোগের মতো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কর প্রণোদনা প্রদান, প্রবিধানকে সহজীকরণ এবং পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছে।