যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, যারা বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার হরণ, ভয়ভীতি ও হামলাকারীদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক অধিকার কর্মীর নামও উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য বড় সতর্কবার্তা। এদিকে, মার্কিন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের করণীয় নির্ধারণের জন্য পররাষ্ট্র, শ্রম, বাণিজ্য, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীঘ্রই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার এমন ঘোষণা এসেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এরপর বাংলাদেশে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়নি। তবে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার মন্ত্রণালয়গুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে। এরপর অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারিখ ঠিক করে চলতি সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান এলাহী সমকালকে বলেন, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল দেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছে। শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধিদল শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগেও সন্তোষ প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইইউ ও আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশের রোডম্যাপ অনুযায়ী ৮০ শতাংশের বেশি অর্জিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণার বিষয়ে তারা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শ্রম অধিকারের আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি আইন মন্ত্রণালয় দ্বারা দেখাশোনা করা হয়। প্রয়োজনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসসহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনায় অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শ্রম আইন সংশোধনসহ শ্রম অধিকার রক্ষায় এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ বিষয়ে আর কোনো ঘাটতি আছে কি না তা জানতে শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হবে। এরপর কোনো ঘাটতি দেখা দিলে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তাই এ বাজার বাণিজ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে সার্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তাই তাদের অগ্রাধিকার এখন নিশ্চিত করা যে এটি বাংলাদেশে কাজ না করে।
মার্কিন নীতিকে বেশ উদ্বেগজনক মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, মার্কিন সরকার এত উচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে বাংলাদেশি শ্রমিক নেতার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে তা বিস্ময়কর ও বড় উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের সুনির্দিষ্ট সাধারণত বলা হয় না. সরকার ও শিল্পপতিদের এ দিকে আরও আগে নজর দেওয়া উচিত ছিল। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন আরও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যেত। মার্কিন বিবৃতি থেকে মনে হচ্ছে, বিষয়টি এখন আর মজুরি ইস্যুতেই সীমাবদ্ধ নেই। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজারও পরামর্শ দেন তিনি।