বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি যুক্তরাজ্যে ৩৫০ টিরও বেশি সম্পত্তি সহ একটি রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন।
গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্লুমবার্গ নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। কোম্পানি হাউস কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকী চার্জ এবং যুক্তরাজ্যে এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ব্লুমবার্গ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানগুলি তৈরি করা হয়েছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় একটি প্রপার্টি ২০২২ সালে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়। এই প্রপার্টিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু সাদা রংয়ের বাড়ি। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা হল ও জিমনেসিয়াম।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটস-ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল-এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের আবাসন রয়েছে।
এই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় পঁচিশটি সম্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে যখন এই সম্পত্তিগুলি কেনা হয়েছিল, তখন যুক্তরাজ্যে আবাসন সংকট ছিল এবং এর মধ্যে ৯০ ভাগ নতুন নির্মিত বাড়ি ছিল।
ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি প্রপার্টি খুঁজে পেয়েছে। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টির নথি অনুসারে, এসব সম্পত্তি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তার এসব সম্পত্তির কারণে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা আছে এমন লেনদেন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন আদৌ কার্যকর কি না।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রাক-নির্বাচনী ঘোষণায় সাইফুজ্জামান তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৮ দশমিক তিন মিলিয়ন টাকা (দুই দশমিক চার মিলিয়ন ডলার) এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের মোট সম্পদের পরিমাণ নয় লাখ ৯৩ হাজার ডলার বলে জানান। তিনি বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণাপত্রে তার যুক্তরাজ্যের সম্পদের পরিমাণ দেখাননি। মন্ত্রী হিসেবে ২০২২-২৩ সালে তার বেতন প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড হিসাবে দেখানো হয়।
সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যের ২০১৭ সালের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইনে সংজ্ঞায়িত ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসন (পিইপি)’ ক্যাটাগরিতে পড়েন। এটি যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তির এজেন্ট, ঋণদাতা, প্রপার্টি আইনজীবী এবং অন্যদের ওপর পিইপি শনাক্ত করার কাজ করে।
এইসব ব্যক্তি সম্পত্তি কেনার মতো ব্যবসায়িক লেনদেনে নিযুক্ত থাকলে তাদের সম্পৃক্ততা অতিরিক্ত তদন্তের দাবি রাখে।
ব্লুমবার্গ তাদের প্রতিবেদনে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাদের মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য সম্পত্তি কেনার সঙ্গে জড়িত আর্থিক সেবা ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনায় ৬৭০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ‘সন্দেহজনক তহবিল’ চিহ্নিত করেছে।
২০১৪ সালে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি খালি হাতে এসেছি এবং আমি খালি হাতে চলে যাব।’ ২০১৯ সালে তিনি ভূমিমন্ত্রী হন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি ধারণা সূচকে ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম।। অতি সম্প্রতি, দেশটির রিজার্ভ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কিন্তু মন্ত্রিসভায় তার পদ হারান। তবে তিনি ভূমি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান