Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / যার সাক্ষী দেওয়ার জন্য অর্থপাচার মামলায় সাজা হয় তারেক জিয়ার, ঘটে ইতিহাসের বিরল ঘটনা

যার সাক্ষী দেওয়ার জন্য অর্থপাচার মামলায় সাজা হয় তারেক জিয়ার, ঘটে ইতিহাসের বিরল ঘটনা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। সেই সাথে বেশকিছু দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একজন বিদেশি নাগরিক সাক্ষ্য দেন এবং এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই বিরল। ১৬ নভেম্বর, ২০১১, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার ব্যবসায়িক সহযোগী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অর্থ পাচারের মামলায় সাক্ষ্য দিতে একজন আমেরিকান নাগরিক ঢাকায় আসেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর এজেন্ট ডেবরা লেপ্রেভোট্টি।

বিএনপির শাসনামলে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় ৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হলে তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মোট ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেন।

২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। আলোচিত এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ডেবরা।

এ সময় ডেবরা তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি এফবিআই-এ মানি লন্ডারিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে ১৬ বছর ধরে কাজ করছি। ২০০৮ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তদন্তে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্সের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বিষয়টি তদন্তের জন্য তা আমার কাছে পাঠায়। আমার তদন্তে প্রকাশ পায়, এ মামলার আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সিঙ্গাপুরে সিটি ব্যাংকে দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে দুটি ভিসা ক্রেডিট কার্ড কার্ড ইস্যু করা হয়। যার একটি মামুনের, অন্যটি তারেক রহমানের নামে। ওই কার্ডের মাধ্যমে মামুন ৭৯ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭৮ ডলার এবং তারিক রহমান ৫০ হাজার ডলার খরচ করেছেন। তারা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, জার্মানি, দুবাই এবং গ্রীসে ভ্রমণ, কেনাকাটা এবং চিকিৎসার জন্য এই ডলার খরচ করেন। বাংলাদেশী ব্যবসায়ী খাদিজা ইসলাম তার সিঙ্গাপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মামুনের সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ডলার জমা দেন।

ডেবরা তার বক্তব্যের সমর্থনে ৪৩ ও ২২৯ পৃষ্ঠার দুটি ডকুমেন্ট আদালতে উপস্থাপন করেন।

সাক্ষীর দেওয়া সুস্পষ্ট তথ্য আদালতে উপস্থাপনের পর ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোঃ মোতাহার হোসেন এ মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেন, যা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

এই নজিরবিহীন ঘটনার সমীকরণ সহজেই মিলে যায় যখন জানা যায়, বিচারক রায় দিয়ে বাড়ি না ফিরেই গোপনে সরাসরি বিমানবন্দরে ছুটে যান। সবার চোখে ধুলো দিয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান তিনি।

তবে তার বিতর্কিত রায় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, সত্যের জয় হয়েছে। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের খালাস বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। মামুনের সাত বছরের কা’রাদ’ণ্ড বহাল রাখা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, “এটা দুঃখজনক যে তারেক রহমান এমন একটি রাজনৈতিক শ্রেণীর সদস্য যার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে পরিচালনা করা, কিন্তু তিনি সচেতনভাবে আর্থিক অপরাধে জড়িত।” তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কনসালটেন্সি ফি’র নামে নোংরা অর্থ উপার্জন করেন। আর এতে তার সঙ্গী ছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এ ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবশালী দুর্নীতি দেশের সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুম’কিস্বরূপ।

রায় হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, যেহেতু তারেক রহমান দেশে নেই এবং তিনি পলাতক সেহেতু তাকে গ্রেপ্তার করা বা সে যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে এরপরই তার সাজা কার্যকর করা হবে। এই কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করার জন্য বিচারক আদালতকে নির্দেশ প্রদান করেন মাননীয় হাইকোর্ট। এদিকে তারেক রহমান আপাতত দেশে ফিরছেন না। তবে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

About bisso Jit

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *