ক্ষমতা এবং বিবেচনাবোধ যখন একটা মানুষের ভেতর থেকে চলে যায় তখন তার ভেতর ভুল সিদ্ধান্ত আসতে থাকে। বাংলাদেশের প্রশাসনের উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এটা দেখতে পাওয়া যায়। জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করে থাকেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিন্তু তারা নিজেদের এটা কখনও মনে করেন না। তারা অনেক অনুচিত সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দিয়ে থাকেন সাধারনের ওপর। এবার তেমনই একটি ঘটনা ঘটলো এক ডিআইজির কান্ডে।
শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতেন না কুমিল্লার মুরাদনগর থানা পুলিশ। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট সড়কের মুরাদনগর থানার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েন ডিআইজি। এ সময় মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বা পুলিশের কোনো সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
এ ঘটনার পরপরই মুরাদনগর থানা থেকে ওসি আবুল হাসিমকে প্রত্যাহার করা হয়।
শনিবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বদলির কারণ সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি ওই কর্মকর্তা।
দিকে জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কে কোম্পানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল এলাকায় তিনি ব্যাপক যানজটের কবলে পড়েন। প্রায় ৩০ মিনিট যানজটে আটকে থাকার পর তিনি কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে খবর দেন। খবর পেয়ে সাদা পোশাকে সড়কে ছুটে আসেন ওসি। কিন্তু ততক্ষণে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের একটি আদেশের বরাত দিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত স্মারক নং এডমিন ৬২৬৬ একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওসি আবুল হাসিমকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে সংযুক্ত করা হলো। শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেন।
ওসি আবুল হাসিম বলেন, ডিআইজি স্যার ওই সড়ক দিয়ে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন এমন কোনো তথ্য আমার কাছে ছিল না। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মহাসড়কে যানজট নিরসনে নিয়োজিত থাকলেও আমি জানলে যানজট নিরসন করতাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাহারের চিঠি পেয়ে ওসি মুরাদনগর ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশে বদলি বা প্রত্যাহার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও ওসি আবুল হাসিমের প্রত্যাহার একটু ব্যতিক্রম। আমরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি করছি। ডিআইজি একটি থানায় সড়ক পথ দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ওসি জানবেন না, এটা হতে পারে না। তাই হয়তো ওসিকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এই খবরটি গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ওই ডিআইজির এধরনের সিদ্ধান্তকে অনেকটা স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন এটা তার সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার। তিনি যেটা করেছেন সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি ওসিকে প্রত্যাহার করেছেন কোন কিছু না জেনে, না বুঝে। তাই এটা অবিবেচকের মতো কাজ ছাড়া কিছু নয়।