রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫শ’ কোটি ডলারের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৭ আগস্ট) গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোজাট্রম শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাতের সুযোগ দেয়, যার মধ্যস্থতা করেছিলেন তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় এবং ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিক।
সম্প্রতি গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন এ বিষয়ে নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে পোর্টালটি ২০১৮ সালে চালু করা হয়েছিল। তারা বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির তদন্ত করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পর এটি দেশের বিদ্যুতের চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম।
ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকীর মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার হওয়া অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
২০১৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার সহচর ছিলেন। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।
২০০৯ সালে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা এবং চাচা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ‘‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে জুমানা ইনভেস্টমেন্টস নামে একটি কোম্পানিও রয়েছে।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প বলছে, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থপাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছেন রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি। গত বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে তা কঠিন কিছু নয়।’
রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। এটি নির্মিত হলে এর দুটি ইউনিট থেকে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
প্রকল্পটির ৯০ ভাগ অর্থায়ন হচ্ছে রাশিয়ার ঋণে। ১০ ভাগের জোগান দিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটিতে ভিভিইআর প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার প্রত্যেকটির উৎপাদন সক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট করে। চলতি বছর প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর দেশে আসে। পরে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে রাশিয়া।