ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের জের ধরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারাণ বুয়েট’র অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। তবে এ ঘটনায় থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরেও এখনও রায় প্রকাশ না হওয়ায় রীতিমতো হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।
তবে দুই বছর আগে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেওয়া আবরার হত্যা মামলার আসামিদের সাজা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ বুধ্বার। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
এমন একটি দৃষ্টন্তমূলক রায় হোক, যাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়- এটুকু প্রত্যাশা নিয়েই অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, “এখানো শেষ রাতে ঘুম ভেঙে যায়, ছেলেটার কথা মনে পড়ে। সারাজীবনই মনে পড়বে। ”
ভারী হয়ে আসা কণ্ঠে বরকতুল্লাহ বলেন, “আমার ছেলেটা কখনো শিবির করেনি। অথচ ওকে শিবির বলে পিটিয়ে মারল।”
এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের তিনজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলে।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন।
কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক।
আবরারের বাবা বলেন, “আদালতের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা আছে। রায়টা যেন এবার হয়। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি। কেউ যেন মামলা থেকে খালাস না পায়। রায়টি যেন দৃষ্টন্তমূলক হয়। আর যেন আমার মত কোনো বাবা মায়ের বুক খালি না হয়।”
আবরারের মামা মোফাজ্জল হোসেন থাকেন ঢাকার রামপুরায়। রায়ে আগের দিনও তিনি আফসোস করছিলেন ভাগ্নের বিপদে পড়ার খবর সময়মত না পাওয়ার জন্য।
“যদি নির্যাতনের ঘটনাটা জানতাম, যদি শুধু একটা ফোন পেতাম, তাহলেও সেদিন হলে চলে যেতে পারতাম। আবরারকে বাঁচাতে পারতাম।”
সংবাদ মাধ্যমকে মোফাজ্জল হোসেন আরও দাবি করেন, আবরার হ’ত্যা মামলার রায় যেন আর না পেছায়। এ সময়ে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি করেন। এদিকে আজ এ মামলার রায় নিয়ে রীতিমতো বেশ চিন্তিত আবরারের পরিবার। কেননা এর আগেও কয়েবার এ মামলার রায় পিছিয়েছে, তাই তাদের দাবি আজ যেন এ মামলার রায় না পেছায়।