বাংলা ছোট পর্দার বেশ সাড়া জাগানো একজন অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর। তবে পর্দায় ‘ঊর্মিলা’ নামেই তাকে চিনে থাকেন ভক্তরা। অভিনয় জগতে পা রাখার আগে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এরপর একনাগারে বিজ্ঞাপন, নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করেন গুণী এই অভিনেত্রী। এদিকে করোনার প্রকোপ কাটিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর আবারো কাজে ফিরেছেন তিনি।
অভিনয়শিল্পীর সমসাময়িক কাজ, ব্যক্তিজীবন ও শুটিং নিয়ে এবার কথা হলো তার সঙ্গে-
আপনি দীর্ঘদিন অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। আপনার এই পথচলা কেমন উপভোগ করছেন?
ঊর্মিলা: হ্যাঁ, এখন দীর্ঘ বছর বলা চলে। এই পথে সবার ভালোবাসা পেয়েছি। মোটামুটি একটা অবস্থানে আছি এখন। এই প্রফেশনে এসে সিনিয়র, জুনিয়ার, বন্ধু-বান্ধব অনেকেই তৈরি হয়েছেন। সবাই অনেক হেল্পফুল। বিশেষ করে আমার ভক্তদের কিংবা দর্শকের কথাতো বলতেই হচ্ছে। তাদের জন্যই আজকের আমি। তাদের ভালোবাসা আমাকে প্রতিটা সময়ই মুগ্ধ করে। আমি খুব আনন্দ উপভোগ করি। সেজন্য সবার প্রতি ভালোবাসা।
সম্প্রতি আপনার অভিনীত ‘শান্তি মলম ১০ টাকা’ ধারাবাহিক নাটকের চরিত্রটি কেমন?
ঊর্মিলা : এটা ঠিক, কিছুটা ব্যতিক্রম চরিত্রে অভিনয় করছি। নাটকটিতে আমি কোহিনুর নামের চরিত্রে অভিনয় করছি। মোটামুটি ভালো একটা জায়গা আছে অভিনয় করার। এর আগে অভিনেতা আরফান ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কোন গ্রামেও কাজ করা হয়নি। এছাড়া লাভলু ভাইতো খুব মজার একজন মানুষ। তাই খুব উপভোগ করছি শুটিং। অন্যদিকে দর্শকের রেসপন্সও পাচ্ছি খুব।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
ঊর্মিলা: খুব ভালো। নির্মাতা হিমু ভাইয়ের সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ। খুব সিরিয়াস যখন তিনি নির্মাতা। আবার মন মতো যখন দৃশ্য তিনি পেয়ে যান তখন দেখা যায় খুব ফান মুডে থাকেন। এরপর আবার গল্প করতে করতে বিষয় গুলো সহজ করে দেন। শুধু হিমু ভাই না, আমার যে সহশিল্পীরা আছেন এই নাটকটিতে, তারাও একইরকম। যখনই মনে হয় একটু বোরিং লাগছে কারও, ঠিক তখনই ব্রেক নিয়ে কিছু আড্ডাবাজি করে আবারও শুরু হয় দৃশ্যধারণ। এর কারণ একটাই কাজের মতো কাজ একবার করলেই হয়, বারবার প্রয়োজন হয় না। আর সবাইতো মানুষ, একটু বিরক্তি, ক্লান্তি তো আসবেই। তাই শুটিংয়ের দৃশ্যধারণ করাটাও জরুরি আবার তার মাঝে আড্ডাটাও জরুরি।
ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটছে?
ঊর্মিলা: বেশ ভালো আছি এখন। যেহেতু অভিনয় করি তাই শুটিং থাকলে ভালো লাগে। পারিবারিকভাবে বলতে গেলে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি।
দিনশেষে নিজেকে কতটুকু সময় দিতে পারেন?
ঊর্মিলা: খুব বেশি একটা দিতে পারি না। তবে চেষ্টা থাকে নিজেকে সময় দেওয়ার। এজন্য মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে ঘুরতে যেতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলতে চাওয়া।
নতুন কোন কাজের খবর আছে?
ঊর্মিলা: হাতে ঈদের কাজের স্ক্রিপ্ট, গল্প এখনই চলে আসছে। সেগুলো পড়ছি। চরিত্র ভালো লাগলে রাজি হচ্ছি। অন্যদিকে ধারাবাহিক নাটক ও সিঙ্গেল নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব আছে। সেগুলো নিয়মিত করছি।
নিজেকে নিজে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ঊর্মিলা : আমি আসলে খুব আবেগী। সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করি। যদিও এতে কষ্টের পরিমাণ অনেক সময় বেশি থাকে কিন্তু তারপরও আমি বিশ্বাস করি। যার যার জায়গা থেকে যে তার প্রাপ্যটুকু পাবে। আমি সততার সঙ্গেই বিশ্বাস করতে চাই।
অভিনয়ের ব্যস্ততা আর ব্যক্তি জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে কি কোন তফাত খুঁজে পান?
ঊর্মিলা: তফাৎ তো অবশ্যই আছে। অভিনয় জীবনের মধ্যে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশেনের মধ্যে থাকতে হয়। গল্প স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চরিত্রে নিজেকে রূপান্তরিত করতে হয়। শুটিংস্পটে নির্মাতাসহ সবার কথা শুনতে হয়। মন দিয়ে কাজটা সম্পন্ন করতে হয়। আর যখন শুটিং থাকে না তখন তো আমি আমার নিয়মেই চলি। কোন নিয়মকানুন নেই।
দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
ঊর্মিলা: শুটিংয়ের জন্য দেশের বাইরে যাওয়া কথা ছিল। কিন্তু সিডিউল বা করোনার জন্য ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না; যাব কি যাব না, এই ভেবে থাইল্যান্ড যাওয়া ক্যানসেল করে দিয়েছি। অন্য দেশেরটা এখনও বলতে পারছি না।
এখন তো প্রায় সবাই ওটিটির দিকে ঝুঁকছে। আপনিও যাচ্ছেন কি?
ঊর্মিলা: বেশকিছু স্ক্রিপ্ট এলেও চরিত্রগুলো আমার মনমতো হচ্ছে না। যার কারণে এখনো ওটিটিতে যাওয়া হয়নি। তবে যদি ভালো মানের গল্প ও স্ক্রিপ্ট আসে, তাহলে অবশ্যই অভিনয় করবো। আমি সেই মানের চরিত্রের জন্যই অপেক্ষা করছি। যেটা দেখলে দর্শক বলবে ওয়াও ঊর্মিলা বদলে গেছে।
বাসায় বসে কি নাটক কিংবা সিনেমা দেখেন?
ঊর্মিলা: চেষ্টা করি দেখার। শুধু যে নাটক কিংবা সিনেমা দেখি বিষয়টা এমন না। অনেক সময় নতুন নতুন রান্নার রেসিপিও দেখি। মোদ্দাকথা হচ্ছে, ভালো লাগার মতো কিছু থাকলে দেখি। টেলিভিশনে দেখতে না পারলেও ইউটিউবে দেখি। তবে শুটিং থাকলে তেমন একটা সময় পাই না এখন।
অভিনেত্রীর বাইরে সবচেয়ে বেশি কি ভালো লাগে?
ঊর্মিলা: আমি প্রচুর আড্ডা দিতে পছন্দ করি। সেটা স্কুল জীবন থেকেই। এজন্য আমার বন্ধু সংখ্যাও অনেক বেশি। তবে এখন আর পারি না। এটা খুব মনে পড়ে আমার। প্রায়ই অতীতের অনেক কিছু মনে পড়লে একা একাই হাসি। তাই ভাবি, মানুষ কেন বড় হয়!
আপনিতো ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কি রাজনীতিতে আরও পাকাপোক্ত হবেন?
ঊর্মিলা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করেছি। এটা আমার ভালোবাসার জায়গা। যদি ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু অপশন আসে, তাহলে অবশ্যই রাজনীতি করব। এখন আওয়ামী লীগের উপমহিলা কমিটির হয়ে কাজ করছি। অভিনয়ের বাইরে যতটুকু করব ততটুকু হচ্ছে রাজনীতি। তবে যদি রাজনীতিতে তেমন কোনো পদ না পাই তাতেও আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ আমি রাজনীতি ও অভিনয় দুটোই ভালোবাসি এবং ভালোবেসেই সব করি।
মিডিয়ায় তো প্রায় সবাই সোস্যাল ওয়ার্কিং করছে। আপনিও কি করেন?
ঊর্মিলা: আমি আসলে ব্যক্তিগতভাবে আমার আশপাশের মানুষদের খেয়াল রাখছি। যতটুকু পারি তাদের হেল্প করছি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কোনো মাধ্যমে জড়িত নই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, যে মানুষ আমার বাসায় বাজার পৌঁছে দেয়, তার খোঁজ নেয়া দরকার। যে দোকান থেকে আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি, সে কেমন আছে, তার খোঁজ নিই। আমার শুটিং টিমের কারা বিপদে আছে তাদের খবর রাখি। আমার পাশের বাসার মানুষজন কে না খেয়ে আছে তার খবর রাখি। আমার ড্রাইভার যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত পৌঁছে দেয় আমার গন্তব্যে, আমি তার খবর রাখার চেষ্টা করি এবং তাদের সবার সমস্যা সামধান করার চেষ্টা করি। এটাই আমার বর্তমান সোস্যাল ওয়ার্ক।
২০০৯ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সবার নজরে আসেন ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর। এরপর বিজ্ঞপনের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন তিনি। আর এরই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে এক পর্যায়ে অভিনয় শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ঊর্মিলা। বর্তমানেও বেশ দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন গুণী এই অভিনেত্রী।