Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / যদি প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও হন, তবু কমিশনে এসে তথ্য দিতে বাধ্য: জয়

যদি প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও হন, তবু কমিশনে এসে তথ্য দিতে বাধ্য: জয়

বাংলাদেশ সরকারের প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশের সামরিক বাহিনীতে ২৬টি অভ্যুত্থানের তথ্য সামনে এনেছেন এবং সেই অভ্যুত্থানে প্রায় ২৫০০ এর কাছাকাছি সংখ্যক সে’না কর্মকর্তা নিহ’ত হয়েছেন, এমন তথ্য দিয়েছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর রাতের দিকে তিনি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে’সবুকে করা একটি পোস্টে এই সকল তথ্য তুলে ধরেন এবং তদন্ত করার উপর গুরুত্ব জানিয়ে বলেন, “প্রমাণ লুকানোর জন্য নথিপত্রও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এমন ধরনের তথ্যও রয়েছে।”

জয় লিখেছেন, “জিয়াউর রহমানের আমলে অর্থাৎ ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশে প্রায় ২৬টির মতো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন এই সংখ্যাটি ২১। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ২ অক্টোবর, ১৯৭৭-এ। এই অভ্যুত্থান সম্পর্কে বেশিরভাগ তথ্য জানা যায়। বাকিটা রয়েছে ধো্ঁয়াশার ভেতর।

“১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে অভ্যুত্থানে শতাধিক সে’না কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই নিহ’/ত হন। বিদ্রো’হ দমন করতে গিয়ে অনেককে হ’/ত্যা করা হয়। বিচারের নামে শত শত সেনা নি’হ/ত হয়। সব মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় দুই হাজার পাঁচ’শোর মতো হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় লিখেছেন, “তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি সেনাকে ফাঁ’/সি ও ফা’য়ারিং স্কো’য়াডের মাধ্যমে হ’/ত্যা করা হয়। বাকিদের প্রয়ানেরর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। সেই সময় থেকে আজও তারা পরিবারের কাছে নিখোঁজ। জিয়াউর রহমানের আমলে সাম’রিক বাহিনীতে অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা ও মৃ’তের সংখ্যা মেলানো খুবই কঠিন। এ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।

“প্রায় ৪৫ বছরের মাথায় এসে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়ার আমলে নিহ’তদের তালিকা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ রকম একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কতটা কঠিন? এটি আদৌ কি সম্ভব? সেই সময়ের বেশির ভাগ প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত নেই। আবার অনেক দালিলিক প্রমাণ নষ্ট করারও অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রায় হয়নি বললেই চলে।”

পু’ড়িয়ে ফেলা হয়েছে নথি

সে সময় নথিপত্র পু’ড়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরে জয় লিখেছেন, “সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসান পিন্টু এ বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। “এটি খুব কঠিন কাজ,” এমনটিই তিনি বলেন। তবে অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। সম্ভবত কিছু প্রামাণ্য বা দালিলিক প্রমাণ এখনও ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া যেতে পারে। নিহ’তদের কয়েকজনের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনরা এখনও জীবিত রয়েছেন। আপনি যদি দ্রুত কাজ শুরু করেন তবে সত্যের খুব কাছাকাছি যাওয়া এখনও সম্ভব। কিন্তু দেরি করলে বা আরও ১০ বছর পর করলে কিছুই মিলবে না। ”

জায়েদুল আহসানের ভাষ্যে জয় লিখেছেন, “কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ওই ৫ বছরে কমপক্ষে ১৯টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। তবে নিহ’তের সংখ্যা কারও কাছে এককভাবে নাই। হয়ত বিচ্ছিন্নভাবে আছে। যত দ্রুত সম্ভব একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠন করা দরকার। যে কমিশন ওই সময়কালের হত্যা, হ’/ত্যাকাণ্ড, নির্বিচার হ’/ত্যা, বিনা বিচারে হ’/ত্যা এবং বিচারের নামে প্রহসনের ট্রাইব্যুনালে হ’/ত্যা বা ফাঁ’সি– এসব কিছুর তথ্য সংগ্রহ করবে। তথ্য সংগ্রহের উপায় হলো দলিল-দস্তাবেজ বা মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণ।”

তবে দলিল-দস্তাবেজ জিয়া ও এরশাদ দুই আমলেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে দাবি করে জায়েদুল বলছেন, এখনও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও কারও কাছে থাকতে পারে। সেগুলো আহ্বান করা ও সেই সময়ের মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।

জায়েদুল আহসানের মতে, এই কমিশন দুভাবে গঠিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি বা সাবেক প্রধান বিচারপতি হতে পারেন এটির প্রধান। তার সঙ্গে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও গবেষক থাকতে পারেন। আবার সংসদীয় কমিটিও হতে পারে।

এই তথ্যানুন্ধানী কমিশনকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন করার প্রয়োজন মনে করেন জায়েদুল, যাতে তথ্য চেয়ে তারা যে কাউকে তলব করতে বা সমন জারি করতে পারে। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও হন, তবু কমিশনে এসে তথ্য দিতে বাধ্য থাকেন।

লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবিরকে উদ্ধৃত করে জয় লিখেছেন, “জিয়ার আমলে সশ’স্ত্র বাহি’নীতে চলা হ’/ত্যা, গণহ’/ত্যা, গণফাঁ’/সি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানী কমিশন গঠনের জন্য অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম এই কমিশন গঠনের দাবি ওঠে জাতীয় সংসদে। এরপর নানা সময়ে আমার বই ধরে সংসদে বিভিন্ন সংসদ সদস্য দাবি তুলেছেন। কিন্তু কমিশন গঠন হয় না, তথ্যের সন্ধানও হয় না। প্রাণ হারানো সে’নার তালিকাও হয় না।”

মহিউদ্দিন আহমেদ যিনি দেশের একজন খ্যাতিমান লেখক এবং রাজনৈতিক গবেষক তাকে উদ্ধৃত করে প্রযুক্তি উপদেষ্টা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘সরকার যদি চায় তাহলে এরকম একটা পূর্ণ তালিকা করা সরকারের জন্য খুব কঠিন কিছু হবে না। কারণ সেই সমযয়ে যেটা ঘটেছে তার প্রতিটি ঘটনার বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড রয়েছে। সরকার যদি চায় তাহলে সকল তথ্যই সরকার বের করতে পারবে। কারণ সেই সময়কার অনেকেই এখনও জীবিত রয়েছেন। তারা এই সকল ঘটনার তথ্য দিতে পারবে। আর যাদের ফাঁ’/সি হয়েছে তাদের সমস্ত তথ্য ইতিমধ্যে জেলখানা গুলোতে রেকর্ড করা আছে।’

About

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *