একটি দলের নেতাকর্মীদের সময় ভেবে চিন্তে যেকোনো কাজ করতে হয় বা যেকোনো কথা বলতে হয়। কেননা দলের সুনাম ক্ষুন্ন হবে সেই ধরণের কোনো কাজ করাটা আদৌ উচিত না। দলের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়াটা প্রত্যেক নেতাকর্মীর একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এমন কোনো কথা বলা ঠিক না যার কারণে দল তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। সম্প্রতি জানা গেছে এক নৌকা প্রার্থী বলেছেন ভোট দিলে কেন্দ্রে আসবেন আর তানাহলে কেন্দ্রে আসবেন না।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচন আগামী ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নবপ্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে হামলা ও ভাংচুরসহ ভয়ভীতি ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় বাধা। তার অনুসারীরা দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাধারণ ভোটারদের এজেন্ট ও প্রতিপক্ষ আলতাফ হোসেন খানকে (ঘোড়া) হুমকি দিচ্ছে। তাদের সাফ কথা, ‘নৌকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে আসবেন। নইলে অপমানিত হবেন”, অভিযোগ করেন সাধারণ ভোটারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলতাফ।
বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে এসব ঘটনার বিষয়ে ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন প্রার্থী আলতাফ। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ১১ দপ্তরেও জমা দেওয়া হয়েছে। পরে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ও বহিরাগতদের প্রভাব রোধের দাবিতে তিনি (আলতাফ) সংবাদ সম্মেলন করেন।
জেলা শহরের মাদাম এলাকার রোজ গার্ডেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী নিজেই নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলীর ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন গত ১৪ জানুয়ারি মারা যান। এ কারণে আগামী ২৭ জুলাই উপনির্বাচন রয়েছে। লক্ষ্মীপুর পৌরসভা, সদর ও চন্দ্রগঞ্জ থানার সিনিয়র নেতারা প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। সালাহ উদ্দিন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু সালাহ উদ্দিনের পক্ষে জনসভা করেন। বুধবারও (২০ জুলাই) লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ পাটোয়ারীসহ বহিরাগত একদল নেতাকর্মী প্রচারণায় অংশ নেন।
আলতাফের অভিযোগ অনুযায়ী, মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন জাভেদ ৫০-৬০ দলীয় কর্মী নিয়ে দিঘলী বাজারে তার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায়। কয়েকটি চেয়ার ভাংচুর ও দুই শ্রমিককে মারধর করা হয়। এর আগে মাইক ভাঙচুর এবং প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
রাব্বি, বাবুল, তাজুল ইসলাম, রাকিব হোসেন মুন্না, মাকসুদুল করিম মামুন, আলাউদ্দিন, সাবু, আব্দুল কাদের, জুয়েল রানা, জসিম, সাইফুল ইসলাম রাফিসহ সহযোগীরা সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের নিয়ে যাচ্ছেন। তারা পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। বলছেন, তাদের সাফ কথা- ‘নৌকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে আসবেন। অন্যথায়, এটি একটি অপমান হবে. নির্বাচনে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।
আলতাফ হোসেন খান বলেন, প্রার্থী জাবেদ ও তার কর্মীদের আতঙ্কে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পৌরসভা ও সদরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের বহিরাগতরা প্রতিদিন তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নৌকায় ভোট না দিলে তাদের অপমান করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহ উদ্দিন চৌধুরী মন্তব্যের জন্য জাবেদারের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ফোন কেটে দেন। এ সময় ফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে কৃষকলীগ নেতা মাকসুদুল করিম মামুন, যিনি নিজেকে তার ভাতিজি পরিচয় দিয়েছেন, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে এ অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক জানান, এ পর্যন্ত প্রার্থী আলতাফ হোসেন খানের বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো তদন্ত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভোট দেওয়া হলো সম্পূর্ণ নিজস্ব মনের একটি ব্যাপার। যার যার ভোট সে সে দিবে যাকে খুশু তাকে দিবে। এখানে জোর করার কিছুই নেই। সাধারণ মানুষের ভালো বাসা নিয়ে নির্বাচনে জয়জুক্ত হওয়াটাই হলো সফলতা ও স্বার্থকতা। জোর করে কোনোকিছু পাওয়ার মধ্যে কোনো স্বার্থকতা নেই।