আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছাতে চায় তৃণমূল বিএনপি। সম্প্রতি রাজধানীর তোপখানা রোডে তৃণমূল বিএনপির কার্যালয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে দলটির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে হাত মেলাব না। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করব।
তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তিনি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছেন কি না, থাকলে কার সঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো দল জোট করেনি। তবে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় দলের সমন্বয়ে গঠিত প্রগতিশীল ইসলামী জোট আমাদের দলীয় প্রতীকে চলছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে আমরা বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেইনি।
আমরা নির্বাচন বয়কট করব না। অবশেষে নির্বাচনে লড়ব। যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকব। আমি মাঠের মানুষ। এখন যদি দেখি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করব
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, আমরা নির্বাচন বয়কট করব না। অবশেষে নির্বাচনে লড়বো। যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকব। আমি মাঠের মানুষ। এখন যদি দেখি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করব।
বিএনপি থেকে আপনার দলে কতজন যোগ দিয়েছেন? জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, কে কোন দল থেকে এসেছে তার খবর আমরা রাখি না। শুধু বিএনপি নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আমাদের দলে আসছে। ফলে কারও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের দলের আদর্শে বিশ্বাসী যে কেউ যোগ দিতে পারেন। আমরা কাউকে জিজ্ঞেস করি না আপনি হিন্দু না মুসলিম, আওয়ামী লীগ না বিএনপি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক না থাকায় তৃণমূল বিএনপিতে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে কি না তা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
আপনার নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো চমক আছে কি না জানতে চায় সাধারণ মানুষ। জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু জিনিস বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়নপত্র নিতে এখন ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে মনোনয়ন ছাড়া নির্বাচন করা যাবে না। আমরা এই ব্যবস্থা ভাঙতে চাই। আমরা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা খুলে দেব। দলীয় প্রতীক থাকবে না। যারা দলের না হলেও সমাজের ভালো মানুষ, তাদের স্থানীয় নির্বাচনে সুযোগ দিতে হবে। আমরা এরকম কিছু পদক্ষেপ নেব।
আমি একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচন করছি এমনটা বলা যাবে না। আমি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করব। সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনও এমপির পরিবারের হাতে লাঞ্ছিত হন। তারাও চায় আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করি
তৈমুর আলম খন্দকার
প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কথা বলার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচন করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করছি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচন করছি এমনটা বলা যাবে না। আমি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করব। সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনও এমপির পরিবারের হাতে লাঞ্ছিত হন। তারাও চায় আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করি।
নির্বাচনের পর তৃণমূল বিএনপি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে নাকি সরকারের শরিক হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘ কিভাবে আপনি যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা? সরকারের সঙ্গে থাকলে তাদের সঙ্গে নির্বাচন করতাম। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছি। নির্বাচনের পর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোথায় থাকবে। তবে সরকারের সঙ্গে হাত মেলাব না।
জনগণ কেন তৃণমূল বিএনপিকে ভোট দেবে- জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি দুই দলের কারসাজি। মানুষ মনে করে এদেশে রাজনীতি করতে হলে দুই দলের হাত ধরতে হবে। কিন্তু জনগণ এখন তৃতীয় শক্তির উত্থান চায়। যার ক্লিন ইমেজ থাকবে। আশা করছি, সেই তৃতীয় শক্তি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। 16 জানুয়ারী, 2022 তারিখে, তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে মেয়র পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে পরাজিত হন।
বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি দল দ্বারা চালিত হয়। মানুষ মনে করে এদেশে রাজনীতি করতে হলে দুই দলের হাত ধরতে হবে। কিন্তু জনগণ এখন তৃতীয় শক্তির উত্থান চায়। যার ক্লিন ইমেজ থাকবে। আশা করি, তৃতীয় শক্তি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারব
তৈমুর আলম খন্দকার
তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন।