অভিনয় শিল্পীরা নিজেদের নৈপূন্য দেখিয়ে ভোক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নেন। ভক্ত ও দর্শকরা তাদের অভিনয় দেখেই প্রশংসায় ভাঁসান।এটায় তারকাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিষয়টি নিয়ে সা/মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ/কটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লে/খিকা মিলি সুলতানা হু/বহু পাঠকদের জন্য নি/চে দেওয়া হলো।
কানে ঝুমকা গলায় ভরাট নেকলেস কৃষ্ণ কেশরাজির সিঁথির গা ঝুমকোলতার মত জড়িয়ে ধরে পরম আদরে লিপ্ত টিকলি। হাতে বাহারি চুড়ি। মেরুন রঙের ইউনিক ডিজাইনের শাড়ি, মাথার পেছনে অলসভাবে ঝুলে আছে ওড়না। ঠোঁটদুটো ঈষৎ ফাঁক হয়ে আছে। চোখদুটোতে রাজ্যের সর্বনাশা চাহনি। এমন মাদকতা ভরা চোখের দৃষ্টি মৌ ছাড়া কেউ বন্টন করতে পারেন না। এই ছবিতে সুপার মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ তার মোহনীয় সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে আছেন। বাংলাদেশের মডেলিং জগতে আমার কাছে একজনকেই চলনে-বলনে মহারানী মনে হয়। আন-বান-শান এই তিনের পারফেক্ট কম্বিনেশন দেখা যায় তার মধ্যে। সাদিয়া ইসলাম মৌ একজন তুখোড় অভিনেত্রীও। ছোটবেলায় রেডিওতে প্রায়ই কয়েকটি কালজয়ী গান বাজতো, তুমি সন্ধ্যাকাশের তারার মত আমার মনে জ্বলবে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি তোমার হাতে দিলাম, শিল্পী আমি তো নই তবুও এসেছি আজ শোনাতে যে গান এই জলসায়, গল্পকথার কল্পলোকে এক যে ছিল রাজার কুমার……… !!
এখানে উল্লেখ্য যে, তুমি সন্ধ্যাকাশের তারার মত গানটির সুর করেছেন তাঁরই আপন সহোদর প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আজমল হুদা মিঠু। আমার আব্বাকে দেখতাম গায়কের সঙ্গে মনখুলে গলা মেলাতেন। আব্বার চমৎকার গায়কী দেখে আমি মুগ্ধতায় বিভোর হতাম। একদিন আব্বাকে প্রশ্ন করলাম, আব্বা উনি কি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়? আব্বা স্মিত হেসে মাথা নেড়ে বললেন, “নারে খুকি উনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নন। উনি আমাদের দেশের Mesmerising voice সাইফুল ইসলাম”। সেদিনই প্রথম আব্বার বদৌলতে আমি কণ্ঠশিল্পী সাইফুল ইসলামকে চিনলাম। আসলেই তিনি ছিলেন মেজমারাইজ ভয়েসের অধিকারী। অসম্ভব মেলোডিয়াস ভয়েস ছিল তাঁর। চোখ বন্ধ করে তাঁর গান শুনলে মনে হত হেমন্ত গাইছেন গানগুলো।
আসলে সে সময়ের কণ্ঠশিল্পীরা অনেক যত্ন করে গান গাইতেন। কণ্ঠে সুরকে ধারণ করতেন ধ্যানের মত করে। এখনকার শিল্পীদের মধ্যে গায়কী নিয়ে সিনসিয়ারিটি নেই। সবাই বড্ড কমার্শিয়াল হয়ে গেছেন। গান গাওয়ার আগে দরদাম নিয়ে কষাকষি করেন। অটো টিউন নির্ভর এদের কণ্ঠ। পরজীবী এসব গায়ক গায়িকা আসলে যতটা গর্জে ততটা বর্ষেনা। এখনকার ফর্মালিনযুক্ত কণ্ঠশিল্পীরা সঙ্গীতের মর্যাদা রাখতে জানেনা। এরা চোখ বন্ধ করে দূষিত কচুরিপানার ডোবাতেও ডুব দেবে। উচ্চশিক্ষিত (তিনি লন্ডনে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন) সুদর্শন এবং উচ্চপদে কর্মরত থেকেও সঙ্গীতকে তিনি শখ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত চলচ্চিত্র “ওরা এগারো জন” এর টাইটেল সং “ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা” গেয়েছেন সাইফুল ইসলাম।
বাংলাদেশের প্রথম মডেল ও নৃত্যশিল্পী নাউজিয়া ইসলাম রাশা হলেন মৌ’র মা। রাশা ইসলাম একজন আইকনিক পার্সন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ‘স্টিল অ্যাড মডেলিংয়ের’ পথিকৃৎ ছিলেন। রাশা ইসলাম নামেই তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। ড্রেসআপ মেকআপে অত্যন্ত স্টাইলিশ রাশা ইসলাম দুর্দান্ত আকর্ষণীয় ও অপরূপ লাবণ্যময়ী হিসেবে সবসময় প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করতেন। তাঁর শাড়ি পরার স্টাইল হাঁটা ও বসার ভঙ্গি ছিল নজরকাড়া। রাশা সাইফুল পরস্পরের প্রেমে পড়ে বিয়ে করেন। চারকন্যা নিয়ে ছিল এই দম্পতির সুখের সংসার। তাঁদেরই সুযোগ্যা কন্যা সাদিয়া ইসলাম মৌ। রাশা ইসলাম সাইফুল ইসলাম দম্পতির ছিল পাঁচকন্যা। ২০২০ সালে ৭৪ বছর বয়সে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যান রাশা ইসলাম। তবে ২০১৭ সালে তার জীবদ্দশায় ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা। বড়মেয়ে শেগুফতা ইসলাম মিথিকে হারান তিনি। প্রিয় বড়বোনের অকাল প্রয়াণে আজও মৌ’র বুক ভেঙে চুরমার হচ্ছে। আজো মডেলিং অভিনয় নৃত্যে মৌ তুলনাহীনা। তার হাস্কি ভয়েসের জন্য বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। মৌ যখন স্বনামধন্য অভিনেতা জাহিদ হাসানের সাথে মন দেয়া-নেয়া শুরু করেন মা রাশা ইসলাম কিছুটা আপত্তি জানিয়েছিলেন। যদিও একসময় মেয়ের ভালোবাসাকে অ্যাকসেপ্ট করেছেন। ধীরে ধীরে জাহিদ হাসান তাঁর সন্তানের জায়গা দখল করে নেন। মৌ জাহিদ এখন পর্যন্ত মহাসুখে ঘর সংসার করছেন। তাদের দুই ছেলেমেয়ে – মেয়ে পুস্পিতা ছেলে পূর্ণকে নিয়ে এই দম্পতির সুখের সংসার । বিস্ময়কর দিক হল, সাতচল্লিশে এসেও মৌ’র গ্ল্যামার মাধুর্যতার এতটুকু কমতি নেই। পৃথিবীতে কিছু সৌন্দর্য রহস্যময় থেকে যায়। আর সাদিয়া ইসলাম মৌ হলেন সেই অধরা রহস্যময় সৌন্দর্যের দেবী।