অভিনেত্রী বুবলী ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে নানা আলোচনায় থাকলেও অভিনয়ে ক্ষেত্রে তার যোগত্যার প্রমাণ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। যদিও অনেকে ক্ষেত্রে ভক্ত ও দর্শক তার ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে বিরুক্ত হলেও অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাকে প্রসংশায় ভাঁসিয়ে থাকে।যার কারণে ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপক সমালোচনা পরও তিনি নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন বিনোদন মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
অবশেষে “প্রহেলিকা” দর্শন সফলভাবে সম্পন্ন করলাম। বুবলি এবং মাহফুজ আহমেদের কারণে ছবিটি আগেই মাস্ট ওয়াচের তালিকায় রেখেছিলাম। আজকে যদি চিত্রপরিচালক হিসেবে আমি চয়নিকা চৌধুরী প্রশংসা না করি খুব আনফেয়ার হয়ে যাবে ব্যাপারটা। অসাধারণ একটা ছবি উপহার দিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী। দর্শককে তিনি গোলকধাঁধার মধ্যে রেখে দিতে পেরেছেন। সিম্পলি এই একক ক্রেডিটটা তাকে দিতেই হবে। আমার মত খুঁতখুঁতে দর্শককে শুরু থেকে শেষ অবধি ট্র্যাপে রেখে দিয়েছেন চয়নিকা। যদিও দু’একটা জায়গায় মনে হয়েছিল, এই বুঝি কাহিনী খেই হারিয়ে ফেললো। কিন্তু না বুদ্ধিমত্তার সাথে সামলে নিয়েছেন সবটুকু। ছবির শুরুতে দেখলাম গ্রামে মারামারির দৃশ্য। কিন্তু সেটার সাথে কাহিনীর কি সম্পর্ক সেটা যখন শেষের দিকে গিয়ে ক্লিয়ার হলাম তখন মগজের জট খুলে গেলো। সাসপেন্স থ্রিলার রোমান্স কনস্পিরেসি ক্রুয়েলিটি –কিনা ছিল “প্রহেলিকা”তে? মাহফুজ আহমেদের কথা কি আর বলব? অভিনয়ে তাঁর ছিল দুর্দান্ত দাপট। পুরোটাই দাবড়ে বেড়িয়েছেন তিনি। মাহফুজের চোখের অভিব্যক্তির কি এক সামান্য ক্ষমতা। সেলুলয়েডের ফিতায় বসে দর্শকের উপর হিপনোটিজম চালানোর দুর্দমনীয় ক্ষমতা আছে তাঁর। এমন রিচ অ্যাক্টর বাতি ধরে খুঁজলেও পাওয়া যাবেনা। মাহফুজ আহমেদ ফরএভার “মাই ডিয়ার” ক্যাটাগরিতে থাকার মত একজন অসম্ভব গুণী অভিনেতা। সিনেমার ক্লাইম্যাক্স যখন কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দিলো তখনই পাজলড হয়ে গেলাম। মাথা হ্যাং হয়ে যায় যায় অবস্থা। মাহফুজ আহমেদকে দিয়ে ধারণার বাইরে চমক দেখিয়ে দিলেন চয়নিকা। সত্যি আমি ধারণা করিনি, মাহফুজকে দিয়েই দুর্দান্ত টুইস্ট আসবে। রহস্যের গভীরতা ও মগজের খোরাক দুটোই পেয়েছি। মাহফুজের মাথার টুপির রহস্য উন্মোচিত হওয়ার দৃশ্য দেখার সময় ভীষণ গুসবাম্পস হচ্ছিলো। গ্রামে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাহফুজের নিষ্ঠুরতামাখা অট্টহাসি দেখার সময় ঠান্ডায় হিম হয়ে যাচ্ছিল বুকের ভিতরটা। সিনেমার সব রহস্যের উত্তর ছিল এখানেই। ভাবিনি এভাবে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকে যাবে “প্রহেলিকা”।
এবার আসি বুবলি প্রসঙ্গে। ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমী বলেছেন, মানুষের মনে কষ্ট জীবিত না থাকলে কোনো অভিনয়ই পারফেক্ট হয়না। তাই যেকোনো মূল্যে মনের কষ্টকে নার্সিং করতে হয়, বাঁচিয়ে রাখতে হয়। বুবলির অভিনয় দেখে মনে হয়েছে শাবানা আজমী কথাটা মিছে বলেননি। অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয় মাতিয়ে দিয়েছেন। বাস্তবসম্মত অভিনয় করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ আবারও দিলেন বুবলি। মৌসুমির শাবনূরের পর কেউ যদি কাউন্টেবল হন তিনি হচ্ছেন বুবলি। তর্কাতর্কি অথবা ঝগড়াঝাটির বিষয় নয়, বুবলি সত্যিই একজন উঁচুদরের অভিনেত্রী। বুবলি চিত্রজগতে আধিপত্য বিস্তার করতে যাচ্ছেন। অভিনয়ে দক্ষতা আছে যার সে-ই টিকে যাবে। বুবলি অনেকদূর যাবেন তিনি। চিত্রনাট্যের সাথে তার মিশে যাওয়া প্রহেলিকাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমার কাছে ছবির সংলাপ খুব ভালো লেগেছে। শৈল্পিক মনে হয়েছে। কেউ কেউ দেখলাম গান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে কাহিনীর সাথে গানের সংখ্যা সহনশীল ছিল। আমাদের চাটগাঁইয়া বদ্দা নাসির উদ্দিন খান এক্সেলেন্ট অভিনয় করেছেন। বদ্দার শৈল্পিক সত্ত্বার সাথে নিষ্টুরতার প্রকাশভঙ্গী ছিল চমকপ্রদ। বিরতির পর আরেকজন এসে সবার ফোকাস একা নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন–রাশেদ মামুন অপু। বদ্দার মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম কাহিনী দুর্বল হয়ে পড়বে। আর আকর্ষণ রইলো না। কিন্তু না, রাশেদ মামুন অপু চমৎকার অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। চয়নিকা চৌধুরী স্টোরি টেলিংয়ের ক্ষেত্রে ক্লাইম্যাক্স ধরে রাখতে পেরেছেন। দারুন কাজ দেখিয়েছেন। মাহফুজের টুপির রহস্য দেখার পর কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার সাফোকেটিং হয়েছিল। ছবি দেখা শেষ হওয়ার পরও সাইকো মাহফুজ আহমেদের নিষ্ঠুর হাসিটা ভুলতে পারছিলাম না অনেকক্ষণ। গা ছমছম করে উঠেছিল তাঁর চোখের দৃষ্টি দেখে।