বাংলাদেশে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বেশ কিছু বক্তব্যে নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা সামলোচনা। বিশেষ করে তার সব ধরনের বক্তব্যের কারনে দলেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের বিপত্তি আর উঠছে নানা প্রশ্ন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকলে তাকে কি শুধু দলের নেতা বলা যায়? দলের জেলা-উপজেলা ও অন্যান্য ইউনিট কমিটিতে যারা আছেন তারা কী? আওয়ামী লীগ তাদের কী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়? এই প্রশ্ন এখন তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন বিব্রতকর মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগের নন।
আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, তিনি দলের বিষয়ে কথা বলার কেউ নন। মোমেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন।
কিন্তু সংবাদ মাধ্যম জানতে পেরেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য ও জেলা কমিটির উপদেষ্টা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, যে মোমেন মিথ্যা মন্তব্য করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের নন।
তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়া কেউ আওয়ামী লীগের নেতা হয় না? সরকারের এমন বড় মন্ত্রীদের দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্থান দেয় না আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড.দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী।
এ ধরনের কেন্দ্রীয় পদে থাকা কয়েকজন নেতা ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের তৃণমূল কমিটিতে রয়েছেন। তাহলে কি তাদের আওয়ামী লীগের নেতা বলা যায় না?
তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য না হলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়া অন্য কোনো কমিটিতে থাকলে জেলা, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিটের কমিটি কেন করা হয় এবং কী হয়? যে কারণে তৃণমূল নেতারা আওয়ামী লীগের প্রাণ বলে?
এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাথায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও তৃণমূলের কমিটিতে ৯০ শতাংশের বেশি এমপি-মন্ত্রী রয়েছেন। তাদের যদি নেতা হিসেবে অস্বীকার করা হয় তাহলে জেলা থেকে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি পর্যন্ত সবাই অস্বীকার করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা না হলে তারা কী? তারা কারা? তারা কোন দলের, তাদের নেতা কে?
সরকারী এমপি-মন্ত্রী হওয়ার পরও তারা যদি সরকারি দলের তৃণমূল কমিটিতে থাকেন, তাহলে কেন তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে! বিরোধী দলের নেতারা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সব এমপি-মন্ত্রী আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীই কোনো না কোনো কমিটিতে রয়েছেন।
যেমন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে নিয়োগ পেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক নেতা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি আগের চেয়ে ভালো করেছে। এই কমিটির সাথে কারো দ্বিমত নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রী শ. রেজাউল করিম পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
কথা হয় নওগাঁ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার একাধিক নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জেলায় থাকলে কমিটিতে শৃঙ্খলা রয়েছে।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের একজন সদস্য বলেন, “শ্যাম রেজাউল করিম আমাদের গর্ব। তিনি বহু বছর ধরে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হলেও তিনি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এবং আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও উপমন্ত্রী মো. শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তারা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ থাকলেও সরকারের মন্ত্রীরা। তারা আবার বিভিন্ন জেলা কমিটিতে। তাহলে কি তারা আওয়ামী লীগের নেতা নয়?
এ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কারনে দলের মধ্যে এখন দেখা দিয়েছে বেশ সমালোচনা।দল এখন তাকে দলের কেউ বলেই মনে করছেন না। তবে এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বলেননি কোন ধরনের কথা।কিন্তু তার তার বেফাঁস সব বক্তব্যের কারনে তাকে কি করা হবে তাও এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি।