সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে। এ বিষয় নিয়ে খোদ আওয়ামীলীগ থেকে বলা হয়েছে তিনি আওয়ামীলীগের কেউ নন। অথচ তিনি সিলেট জেলার আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। দলের কেউ না এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন দায়িত্বশীল পদে থেকে যদি তিনি আওয়ামীলীগের না তাহলে পদটি তিনি কিভাবে পেল। মোমেন আওয়ামী লীগ নেতা, আব্দুর রহমানের বক্তব্য সঠিক নয়’ এ প্রসঙ্গে যা বলা হল।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এক বক্তব্যে বলেছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আবদুল মোমেন দলের কেউ নন। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট আওয়ামী লীগের দুটি ইউনিটে সম্মানিত সদস্য এবং উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।
জানা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমপি বর্তমানে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার তা করার জন্য আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।
এমন বক্তব্যের পর ড. মোমেনকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনার পর ড. মোমেন সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন- ‘আমি বললাম, কেউ কেউ সময়ে সময়ে অনেক উস্কানিমূলক কথা বলে। আপনার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, আমার দেশেও কিছু দুষ্ট লোক আছে। তারা তিলকে তাল করে। আপনার সরকারের একটা দায়িত্ব হবে এবং আমার সরকারেরও দায়িত্ব আছে যে তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি না করে দেওয়া। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্থিরতা থাকবে না। আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার সরকারের স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হবো।’
বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ড. মোমেন আরও বলেন- আমি বলেছি, শেখ হাসিনা সরকারে থাকলে স্থিতিশীলতা থাকে। আর স্থিতিশীলতা থাকলেই আমাদের উন্নয়নের মশাল। ভারতে গিয়ে আমি যেটা বলেছি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? উনি বললেন, শেখ হাসিনার সেই জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম- এটা ঘোষণার পরে, আর দ্বিতীয়ত, উনি বলেছেন, বাংলাদেশ ক্যাননট বি এ হাব ফর টেরোরিস্ট (বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে পারে না)। এর পরে আসাম, মেঘালয়- সবগুলো জেলায় আর সন্ত্রাসী তৎপরতা নাই। সন্ত্রাসী তৎপরতা না থাকায় তাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। উনি বললেন, আমার এখানে বহু হাসপাতাল, বহু ইনভেস্টমেন্ট আসছে। যেহেতু আমাদের এই আসামে কোনো সন্ত্রাসী নেই। এই জন্য শেখ হাসিনা, তার আহ্বানে এটা হয়েছে।’
এরপর তোলপাড় শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে- এমনকি আওয়ামী লীগেও। এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে কোনো অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এটা যে (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন তার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। এটা আমাদের সরকার বা দলের বক্তব্য নয়।
এ বক্তব্যের পর শনিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন- ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সদস্য নন। তাই তার বক্তব্যে দলের বিব্রত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. মোমেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে রয়েছেন। মহানগরের আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্যের পাশাপাশি দলটির সিলেট জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হিসেবে ৩ নাম্বার নাম রয়েছে তার। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি পায়। তবে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ড. মোমেন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য। তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জেলা আওয়ামী লীগের ৩য় উপদেষ্টা।জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে তাকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “সিলেট নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৩ নং সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গত ২৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ১ নং সদস্য রাখা হয় আবুল মাল আবদুল মুহিতকে (সদ্য প্রয়াত) ও ২ নং সদস্য রাখা হয় ড. এ কে আবদুল মোমেনকে। ভুল না হয় এই কমিটি এখনো বহাল আছে।তখন মরহুম বদরুদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আসাদউদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামীলীর একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি ও দলের সাথে সে ঘটিষ্ঠ ভাবে জড়িত। তাকে কেন্দ্র করে যে ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে দলের মধ্যে সে সঠিক নয় বলে জানানো হয়।