পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন কিছুদিন আগে ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়ে দারুনভাবে সমালোচিত হন। এরপর তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। তবে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও তিনি তার পদেই বহাল রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবেই তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এদিকে দলের কয়েকজন নেতাও তার এই ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন, এমনকি তাকে দলের কেউ না বলেও মন্তব্য করেন।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতকে যা যা করা দরকার তা করার অনুরোধ জানিয়ে তার বিবৃতিতে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন কিনা সে বিষয়ে সোমবার হাইকোর্টের আদেশ আসছে।
মোমেনের মন্ত্রী থাকাকালীন মেয়াদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে রোববার এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মুস্তাফিজুর রহমান আহাদ রিটের পক্ষে শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন এরশাদ হোসেন রাশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
এ কে আবদুল মোমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মেয়াদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এরশাদ হোসেন রাশেদের পক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ রিটটি করেন।
মন্ত্রীর বক্তব্যে শপথ ভঙ্গ ও পদত্যাগ দাবি করা হয়। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিবা’দী করা হয়। গত ২১ আগস্ট রিটকারির আইনজীবী এ বিষয়ে আইনি নোটিশ জারি করেন।
যা বললেন মন্ত্রী
গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের রোল মডেল। এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এবং সত্যিকার অর্থে অসাম্প্র”দায়িক দেশে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করার জন্য আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।’
এই বক্তব্য রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করলে তার পদত্যাগ দাবি করতে শুরু করে বিএনপি। আওয়ামী লীগও তার পাশে দাঁড়ায়নি। পরদিন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন অনুরোধ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকার কাউকে দায়িত্ব দেয়নি।
ভারত আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। দুঃসময়ে ভারত আমাদের বন্ধু। কিন্তু আমি ভারতকে ক্ষমতায় থাকার অনুরোধ করবো! এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।’
মোমেনের বক্তব্যে ভারতও লজ্জিত হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এটা যে বলেছেন তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটা আমাদের সরকারের বক্তব্য নয়, দলের বক্তব্যও নয়। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জিত হবে। এ কথা আমরা কিভাবে বলি! বন্ধুরা আছে। অযথা কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না।’
তবে দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়েও এখনও তেমন কোনো কিছু দল জানাইনি। তবে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন সেটা একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে কখনই কাম্য নয়। তবে মোমেন এই বিষয় নিয়ে নিজে কখনও দূ:খও প্রকাশ করেননি।