সময় পরিবর্তন হয় পাশাপাশি মানুষের ভিতরেও আসে নানান রকম পরিবর্তন। ব্যাস্ত-চঞ্চল জীবন গুলোতে মানুষ যেমন বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির ঘটেছে উন্নতি। প্রযুক্তির এই যুগে এসে মানুষ একটু বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। নিজের সুখ দুঃখ গুলো কে যেন সবসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করতে মাতোয়ারা। কিন্তু এমনকি দেখেছেন মানুষ মরে পড়ে আছে অথচ তারা ভিডিও করায় ব্যাস্ত!
সাদা রঙের ডেমু ট্রেনটি আসছিল নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম শহরে। কিন্তু ঝাউতলাতে এসে সেটিতে লাগল রক্তের ছোপ। সিএনজি অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারের সঙ্গে সংঘর্ষে মুহূর্তেই লাশ হয়ে গেলেন তিনজন। তাদের একজন সাতরাজ উদ্দীন শাহীন। হিউম্যান হলারের ভেতর গুরুতর আহত হয়ে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এগিয়ে আসেনি কেউ। সবাই যখন মোবাইল ফোনে ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত, তখন ত্রাতা হয়ে এলেন সাহেলা আক্তার নামে এক নারী। পাশের বস্তিতেই থাকেন। কিন্তু বুকে রাখেন অসীম সাহস। আরো দুই নারীকে সঙ্গে নিয়ে আহতদের উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাহেলা।
এভাবেই সাহসিনী সাহেলা আক্তার জানালেন রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযানের কথা। যে ছাত্রকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দিয়েছেন সাহেলা; জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধে হেরে গেছেন তিনি। হাসপাতালেই মারা গেছেন এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন। তার সঙ্গে প্রাণ গেছে কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ও প্রকৌশলী বাহাউদ্দিনের। এ তিন হতভাগ্যের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। হাসপাতালের করিডোরে বিলাপ করতে করতে মনিরুলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলছিলেন, আমাদের চারজনের কী হবে? সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব? কে নেবে আমাদের দায়িত্ব?
ট্রাফিক কনস্টেবল মো. মনিরুল ইসলাম ট্রেন আসতে দেখে সড়কে চলাচল করা গাড়ি থামাতে গিয়ে নিজেই থেমে গেলেন চিরদিনের জন্য। আট বছর ধরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত ছিলেন তিনি। কোমরে ব্যথা থাকায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে না পারায় কোর্ট পুলিশের ইউনিটে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। দাঁড়িয়ে ডিউটি করা থেকে বাঁচতে থানা থেকে কোর্টেই দায়িত্ব পালনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি। কিন্তু কোর্ট থেকে বদলি করায় ফের রাস্তায় ডিউটি করতে গিয়ে এবার চিরতরে বিদায় নিলেন কনস্টেবল মনিরুল। অসুস্থতার কারণে সিনিয়রদের আর কোনোদিন কোর্ট শাখায় দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বায়না করবেন না তিনি। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে অনিশ্চিত জীবনের পথে রেখে গেছেন মনিরুল।
মেডিকেলে মর্গের সামনে কনস্টেবল মনিরুলের বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা বলেন, বাবাই ছিল আমাদের পরিবারের সব। সারাজীবনের জন্য বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা। বাবার এমন মৃত্যু কোনোভাবে আমরা মেনে নিতে পারছি না।
মনিরের সঙ্গে দায়িত্ব পালনরত অপর পুলিশ কনস্টেবল আলী হোসেন বলেন, আমি ক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সরাতে ছুটে যান। তখন গাড়ি তার ওপর ছিটকে এসে পড়ে।
আসলে আমাদের বোঝা উচিৎ সময়ের চেয়ে জীবনের মুল্য অনেক বেশি। একটু বেশি ব্যাস্ত না হয়ে যদি ট্রেনটি যাওয়ার পর তারা পার হতো তাহলে এমন অবস্থা হয়ত তৈরি হতো না। চলে গেল ৩ টি প্রান,অসহায় হয়ে পড়ল তাদের পরিবার। তার পাশাপাশি আমাদের আরো বেশি মানোবিক হওয়া প্রয়জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে না এসে যদি মানুষগুলো তাদের বাচাঁনোর চেষ্টা করে তাহলে হয়ত বেচেঁ যেতে পারে একটি প্রান।