মাত্র একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফোনালাপে পারস্পরিক লাভজনক ও বিশ্বাসযোগ্য অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন মোদি। তবে সেই আলোচনার পরের দিনই ভারতকে নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেন ট্রাম্প, দেশটির ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ট্রাম্প ভারতকে ‘উচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ’ বলে অভিহিত করেন। একই অভিযোগ তোলেন চীন ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও। তিনি বলেন, তাঁর প্রশাসন এই তিনটি দেশকে এই নীতিতে চলতে দেবে না।
ফ্লোরিডায় হাউস রিপাবলিকানদের এক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমরা আর এটি হতে দেব না, কারণ আমরা আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেব।”
ট্রাম্পের মতে, ভারত, চীন ও ব্রাজিল তাদের নিজস্ব স্বার্থে কাজ করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশ তিনটি ব্রিকস গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাইরের দেশ এবং তাদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করব, যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়। চীন ভয়াবহ শুল্ক আরোপকারী দেশ, ভারত ও ব্রাজিলও তাই। তবে আমরা আমেরিকার স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন মোদি তাঁর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। সোমবার রাতে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। যদিও সেখানে শুল্ক নীতির প্রসঙ্গ উঠেছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
এর আগে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের কূটনীতিকরা ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ও মোদির বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করছেন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ভারতীয় দুটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারত চীনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী ছিল। পাশাপাশি, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান ভিসা সহজ করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আসন্ন বৈঠকে এসব ইস্যু উঠে আসতে পারে।
তবে ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ভারত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও।
এছাড়া, অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই অভিবাসনবিরোধী বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এর মধ্যে সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি ও জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের মতো পদক্ষেপও রয়েছে। তাঁর এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাজারো ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।