Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মেয়েটাকে আদর করতাম, নিজের ছেলে তার সাথে এমন করেছে বিশ্বাস করতে পারছি না

মেয়েটাকে আদর করতাম, নিজের ছেলে তার সাথে এমন করেছে বিশ্বাস করতে পারছি না

সম্প্রতি দেখা গেল রংপুরে ঘটে গেল একটি দুঃখজনক ঘটনা।প্রেম সংক্রান্ত ঘটনার বলি হল এক স্কুলছাত্রী, একাধিক প্রেমিক ছিল ঐ স্কুলছাত্রীর। প্রেমে প্রতারিত হয়েই মুলত কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল তিন প্রেমিক। কিন্তু এখনো তৃতীয় প্রেমিকের সন্ধান মেলেনি। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গিয়ে পুলিশও বিস্মিত। এবং এই ঘটনা নিয়ে সবার মধ্যে একরকম উদ্বেগ কাজ করছে।

বছরখানেক আগে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতে চলা একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছিল। ওই সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তাদের স্বজনরা। আত্মীয়তার সম্পর্কই মূলত তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে বাবা জানান, বছরখানেক আগে একজন পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় নিজেদের সন্তানদের সামলানোর মৌখিক সমঝোতা করেছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শেষের দিকে মেয়েটি নিজের মা-বাবার ফোন থেকে তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতো।

ছেলেটির বাবা জানান, বড় ভাইয়ের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের সূত্রে তাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো মেয়েটি। আত্মীয়তার সূত্রে ছেলের সঙ্গে মামা-ভাগনির সম্পর্ক। পাশেই তার বড় ভাইয়ের বাড়ি। প্রায়ই ওই বাড়িতে বেড়াতে আসতো মেয়েটি। ওই বাড়ির টয়লেট ভালো না হওয়ায় তার বাড়িতে এসে গোসল করতো।

ছেলের মা বলেন, মেয়েটাকে আদর করতাম, খাওয়াতাম। একবারের জন্যও এ পরিণতি হবে বুঝতে পারলে সাবধান হতাম। নিজের ছেলের সঙ্গে এভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে খুন হবে, নিজের সন্তানই তাকে খুন করবে, বিশ্বাস করতে পারছি না।

প্রতিবেশীরা জানান, মেয়েটি সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতো। বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকতো। বড়জোর রাস্তায় যেত। কখনো কেউ খারাপ কিছু দেখেনি।

রংপুর শহরের নাম করা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার পরদিন ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিনই নৃশংস এ ঘটনা ঘটে।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের বাবা বলেন, পরদিন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যে চার বন্ধু চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে বেড়াতে যাবে বলে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আমার ছেলেটি।

তিনি বলেন, ওই দিন রাতে ছেলে ডান হাতের তিনটি আঙুল অনেকখানি কাটা অবস্থায় বাসায় আসে। টিনে লেগে হাত কেটেছে বলে জানিয়েছিল সে। কিন্তু সন্দেহ হয়েছিল আমার। বাড়িতে ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা দিয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বাড়িতে পুলিশ এলে ছেলেকে তুলে দেই। এ ঘটনায় আমার ছেলে হয়তো পরিস্থিতির শিকার। মেয়েটিকে খুন করতে আমার ছেলেকে কেউ বাধ্য করেছে।

তবে পুলিশের কাছে নিজ হাতে প্রথমে স্কুলছাত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কথা স্বীকার করেছে প্রধান অভিযুক্ত স্কুলছাত্রীর সাবেক এ প্রেমিক। পুলিশকে সে জানায়, তিনজন মিলে মেয়েটিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের সময় তার হাতে থাকা ছুরিটি ভেঙে যায়। মূলত এ সময় তার হাত কেটে যায়।

পুলিশ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আরো দুজনের নাম পায় এ প্রেমিকের কাছ থেকে। বাকি দুজনকে মেয়েটির কথিত প্রেমিক উল্লেখ করছে পুলিশ। প্রেমে প্রতারিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তিনজন মিলে মেয়েটিকে খুনের কথা সে স্বীকার করলে বুধবার এক চিকিৎসকের ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রথমে গ্রেফতার হওয়া ছেলেটি ঘটনার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকের ছেলে অপরাধের কথা স্বীকার করে কোনো জবানবন্দি দেয়নি। ফলে তিনজনই প্রেমে প্রতারিত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

বুধ ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে দুই আসামিকে আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত। দুই আসামিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে বলে ধারণা অনেকের। তবে পুরো ঘটনা উন্মোচন করতে হলে ঘটনায় জড়িত তৃতীয়জনকে প্রয়োজন। তাকে খুঁজতে মরিয়া অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত স্কুলছাত্রীর ডায়েরির ক্লু ধরেই প্রকৃত হত্যাকারীর কাছে তারা পৌঁছাতে পারে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বারবার তারা বিস্মিত হয়েছেন।

রংপুর জেলা পুলিশের সার্কেল সি-কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম পলাশ জানান, ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের যে কথাবার্তার আদান-প্রদান হয়েছে, সেসব প্রকাশযোগ্য নয়। মামলাটি নানা কারণে স্পর্শকাতর। উপরন্তু মামলার ভুক্তভোগী ও আসামিদের বয়সসহ নানা বাধ্যবাধকতায় ঘটনার অনেক কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

ঘটনার দিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর শাপলা সিনেমা হলে ছবি দেখার পর পীরগাছার আলীবাবা থিম পার্কে দুজন সময় কাটায়। বেশ খানিকটা রাত হলে বাড়িতে ফেরার তাগিদ দেয় স্কুলছাত্রী মেয়েটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী পথে একটি নির্জনে চারজন মুখোমুখি হয়। ওদের সঙ্গে প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে তিন প্রেমিক মিলে এ খুনের ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও এ কথা উল্লেখ করেছে প্রথম প্রেমিক।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় প্রেম সংক্রান্ত্ বিষয়গুলো বেশ জটিল আকার ধারন করে থাকে এবং সেই সাথে দেখা যায় এই প্রেমের প্রতারনার শিকার হয়ে অনেকে নানা পথ বেছে নেয় এবং নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেয় যেমনটি দেখা গেল রংপুরে

About Rasel Khalifa

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *