বান্দরবানে ট্যুরিস্ট জিপ খাদে পড়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাযর মেয়ে জয়নব খাতুন (২৩) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে । এই মেধাবী ছাত্রী ছিল দরিদ্র পরিবারের একমাত্র ভরসা। জীপ খাদে পড়ে মৃত্যুর পর তার পরিবারের আশা যেন পাহাড়ের খাদে বিলীন হয়ে গেছে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে জয়নাবের বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তারা এভাবেই দুঃখ প্রকাশ করেন।
জয়নব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর ছাত্রী ছিলেন। তার বাড়ি রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল জলিল এবং মাতার নাম জুলেখা বেগম। তিন ভাইবোনের মধ্যে জয়নব সবার ছোট।
জয়নবের বড় ভাই মেহেদী হাসান বাবু বলেন, জয়নবই ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা। আমাদের সব স্বপ্ন তাকে ঘিরে। বোন যে এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। আমি এখন তার মরদেহ আনতে ঢাকা যাচ্ছি।
আমাদের মতো প্রত্যন্ত গ্রাম ও দরিদ্র পরিবারের জয়নাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেল।
সে কোনও কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়েনি। শুধু বাড়িতে পড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল সে জীবনে ভালো কিছু করবে। তার কোনও চাওয়া আমরা অপূর্ণ রাখতাম না। নিজেরা খাই না খাই তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করতাম’—যোগ করেন মেহেদী।
জয়নবের বাবার আবদুল জলিল বলেন, ‘মেয়ের মারা যাওয়ার খবরে ওর মা বাকহীন হয়ে গেছে। আমি কথা বলতে পারছি না। শুধু চাই, মেয়েটাকে গ্রামে আইনা এইখানে রাখবো (কবর দেবো)। আমি কিছু বুঝি না। ছেলেকে পাঠাইছি। আপনারা একটু সাহায্য করেন।’
জয়নাবের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের বিষয়ে তার বাবা বলেন, ‘মেয়ে ঘুরতে যেতে চেয়ে ফোন দিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, বন্ধুরা সবাই গেলে যাইয়ো। এরপর আর কথা বলতে পারি নাই। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরবে ভাবিনি।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস স্টেশন থেকে ৪৫ জনের একটি পর্যটক দল পাঁচটি পর্যটকবাহী গাড়ি নিয়ে কেউক্রাডং যায়। শনিবার সকালে ফেরার পথে রুমা-কেউক্রাডং সড়কের রুমসামপাড়া ও দার্জিলিং পাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় চিঙ্গি ঝিরি নামক স্থানে একটি ভি-৭০ গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই নারী নিহত হন। আহত হয়েছেন ১২ জন। নিহত দুজনের একজন কুড়িগ্রামের জয়নব খাতুন।