গতকাল (বুধবার) রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অবস্থিত এসকেএস টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্সের একটি থিয়েটার হলে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির সংবাদমাধ্যম কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে আয়োজিত প্রদর্শনী আরম্ভ হয়। ঐ অনুষ্ঠানে থিয়েটার হলে ফরিদা ইয়াসমিন, সাজ্জাদ শরীফ, জাহিদ রেজা নূর প্রমূখসহ দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই প্রথম বার মতো, লাল ও সবুজ পতাকার প্রতিনিধিত্ব করেছিল আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রটি। মেয়ের এই ধরনের সাফল্য দেখার পর গর্বিত বাঁধনের বাবা আমিনুল হক।
প্রদর্শনীর আগে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ শিল্পীদের সামনে নিয়ে আসেন এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। এরপর শুরু হয় রেহানা মরিয়ম নূর। রেহানা, একজন মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা, একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, তার নিজের কর্মক্ষেত্র, তার সন্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – সর্বত্র পরিবেশ, পরিস্থিতি – যার বিরুদ্ধে রেহানার নিরপেক্ষ, আপসহীন সং’গ্রাম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
সিনেমা শেষ হতেই দর্শকরা আসন থেকে দাঁড়িয়ে যান। চোখ খুঁজে রেহানাকে। কেননা রেহানা, বসে রয়েছেন তাঁদের সঙ্গেই। দেখা মেলে একটু পর আবেগে ক্রন্দনরত মা-মেয়েকে। বাঁধন তার মেয়েকে সায়রাকে জড়িয়ে কাঁদছেন। কয়েক মুহূর্ত পূর্বে কন্যা ইমুকে নিয়ে রেহানার যে ল’/ড়া’ই দেখা মিললো, তার শেষ দৃশ্যটা যেন পর্দায় নয়, বাস্তবে। পর্দার পরিশিষ্ট দর্শকরা যেন দেখতে পেলেন চোখের সামনেই। সমাজের অনিত্যতার বিরু’দ্ধে ল’/ড়া’ইয়ে একটা সময় হয়তো একাকী কান্না ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সেই কান্না গলে গলে, কপোল বেয়ে এসে বাষ্পায়িত হয়ে যাবে- সেটাই স্বাভাবিক।
মেয়ে সায়রাকে নিয়ে আবেগ সামলাতে পারেননি মা আজমেরি হক বাঁধন, কন্যা সায়রাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই থাকেন। এগয়ে আসেন বাবা প্রকৌশলী আমিনুল হক। তিনিও এসেছিলেন মেয়ের চলচ্চিত্র দেখতে। কন্যা বাঁধনের মাথায় হাত রাখেন আমিনুল হক। সান্তনা দিতে থাকেন। সায়রা মায়ের কোলে মুখ লুকিয়েই ডুকরে কেঁদে ওঠে। কেন এই কান্না, কিসের কান্না কোত্থেকে উঠে আসে এই আবেগ তাঁর উৎস জানে না কেউ। আবেগে রুদ্ধ হয়ে আসে কণ্ঠস্বর যার ফলে টেলিভিশন গণমাধ্যমকর্মীদের মাইক্রোফোন (বুম) উপেক্ষা করতে হয়।
বাঁধন ও কন্যার কয়েক মুহূর্ত ও বাবা আমিনুল ইসলাম- তিন প্রজন্মের আবেগ সকলকেই যেন ছুঁয়ে গিয়েছিল সাময়িক। তারপর সব স্বাভাবিক। আমিনুল হক বলেন, ‘সিনেমায় সায়রা তার মাকে কাঁদতে দেখছে। এমনে সে খুব ইমোশনাল। কান্নার দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। বাসাতে যখন থাকে সেও ইমোশনাল আচরণ করে।’
উল্লেখ্য, আজমেরী হক বাঁধন একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী এবং দন্তচিকিৎসক যিনি ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে দ্বিতীয় রানার-আপ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার বিপরীতে ২০১০ সালে ‘নিঝুম অরন্যে’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি বেশ কিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের “আন সার্টেন রিগার্ড” বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর-এ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিনোদন জগতের দর্শকদের প্রভাবিত করার জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। এই ছবির জন্য তিনি ১৪তম এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (APSA) “সেরা অভিনেত্রী” বিভাগে মনোনীত হয়েছেন।