বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দলের নেত্রী চলে যাওয়ার পর গা ঢাকা দেন বাকি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। তবে নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি দেশেই আছেন।
আওয়ামী লীগ গঠিত সরকার পতনের এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নীরব ছিলেন মাশরাফি। ৯ দিন পর, তিনি অবশেষে একটি বেসরকারি অনলাইন পোর্টালে কথা বলতে রাজি হন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে কথা বলতে না পেরে তিনি সম্পূর্ণ হতাশ। যৌক্তিক আন্দোলনে নিজের অবস্থান প্রকাশ করতে না পারার দায় পুরোপুরি কাঁধে নিয়েছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।
মাশরাফি বলেন, ‘এই কষ্ট থাকবেই। হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সব সময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সব সময়ই থেকে যাবে। সব সময় সব কথা বলা যায় না। কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এত দিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনো যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সব সময়ই থাকবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন মাশরাফি নিজেই। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই পেসার বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দিই (ফেসবুকে)…ততক্ষণে আসলে সব কিছু এত দ্রুত হচ্ছিল…ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে…অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী…সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’
নিজে কিছু না বললেও পরিবারের সদস্যদের ছাত্র আন্দোলনে যেতে বাধা দেননি, বরং উৎসাহ দিয়েছেন বলে জানান মাশরাফি। মেয়েকে বলেছেন, সহপাঠীদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকতে।
মাশরাফি বলেন, শুধু আমি নই, আমি মনে করি, যারা এই আন্দোলন নিয়ে কিছু লিখতে পারেননি বা করতে পারেননি, তাদের পরিবার, বন্ধু বা কাছের মানুষদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
‘আমার মেয়ে হুমায়রা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। আমার সেখানে অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেভাবে দেখতাম না, ওকেও ফলো করতাম না। আমাকে আমার এক ছোট ভাই জানাল যে, হুমায়রা ইনস্টাগ্রামে অনেক কিছু দিচ্ছে বা শেয়ার করছে। ১৭ জুলাই থেকেই দিচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল, ‘হ্যাঁ, আমি এসব দিচ্ছি। তোমার কি আপত্তি আছে?’ আমি বললাম, ‘না, আমার সমস্যা নেই।’ আমি বরং ওকে এটাও বলেছি, ‘তোমার স্কুল থেকে বা বন্ধুরা আন্দোলনে গেলে তুমিও সঙ্গে থেকো।’ আমার পদের জন্য বা চেয়ারের জন্য তাকে বাধা পেতে হবে, এটা কখনও চাইনি’- যোগ করেন মাশরাফি।