কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন অনেকটা সুসম্পন্ন ভাবে শেষ হলেও থামছেনা আলোচনা ও বিতর্ক। একের পর এক অঘটন ঘটেছে। এই বিশ্বকাপ ফুটবলে শুরুতেই সৌদি আরবের মত একটি দুর্বল দল সাবেক বিশ্বকাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিয়ে অন্য রকম একটি ঘটনা সৃষ্টি করে। কিন্তু সেই আর্জেন্টিনাই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠে বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তুলে নিল। এই ফাইনালে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স লড়াইয়ে নামে। কিন্তু সেখানেও গোল নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত মেসির একটি গোল বাতিলের দাবিতে শুরু হয় পিটিশন।
অভিযোগ ওঠে বিশ্বকাপ ফাইনালে লিওনেল মেসির গোলের সময় নিয়ম ভেঙেছিল আর্জেন্টিনা শিবির। এই অভিযোগ তুলে, ফরাসি ফুটবল মহল মেসির গোল বাতিলের দাবি জানায়। এ অবস্থায় মুখ খুললেন ফাইনালের রেফারি সিমোন মার্সিনিয়াক। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যকার ম্যাচে তিনি ভুল করেছিলেন বলে সাফ জানিয়ে দেন। তার এই স্বীকারোক্তির পর ফুটবল বিশ্বে তোলপাড়। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তরা ফরসি সমর্থকদের জন্য একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করছেন। প্রায় ৬৫০,০০০ মানুষের স্বাক্ষরিত পিটিশনে ফ্রান্সের কান্না বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে।
ফাইনালের পর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। সেটার কারনে অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোল বাতিল করার দাবি শুরু হয়েছে। কারণ, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মেসি গোল লক্ষ্য করে শট মারছেন , তখনই মাঠে নেমেছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। যদি রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা ফুটবলাররা মাঠে উপস্থিত থাকে এবং সেই সময়ে দল একটি গোল করে দেয়, তাহলে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী গোলটি বাতিল করা হয়। সেই যুক্তিতে সামিল হয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বিষয়টি কীভাবে রেফারির নজর এড়াল, সেই অভিযোগও আনা হয়েছে।
ফাইনালের পোলিশ রেফারি সিমোন প্রথমবারের মতো এই বিষয়ে কথা বলেছেন। ফাইনালে ভুল করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন তিনি। এমবাপ্পের গোলের ছবিও দেখান তিনি। রেফারির বক্তব্য, ‘এই ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এমবাপ্পের গোলের সময়ও বেশ কয়েকজন ফরাসি ফুটবলার মাঠে ঢুকে পড়েন। তাহলে এটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না কেন?’ যাইহোক, সাইমন স্বীকার করেন যে এক পর্যায়ে তিনি ফরাসি আ”/ক্রমণ থামিয়ে দিয়েছিলেন। এ সময় আর্জেন্টিনার মার্কোস আকুনা বিশ্রী ফাউল করেন। সেই সময়ে ফ্রান্স পুরোদমে আক্র”/মণ করছিল, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল সেই সময়ে খেলা বন্ধ করে কার্ড দেখানো উচিত ছিল। এটা হয়তো হয়নি। এছাড়া ফাইনালে কোনো ভুল হয়নি’, সিমোন স্পষ্টই বলেছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালে তুমুল লড়াইয়ের পর দলের পরাজয় এখনও হজম করতে পারেনি ফরাসি ভক্তরা। আক্ষরিক অর্থেই তাদের ক্ষতে লবণ ঘষে আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকরা আবেদন শুরু করেন। পিটিশনটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেন।
ভ্যালেন্টিন গোমেজ নামে এক আর্জেন্টিনা ভক্তের তৈরি এই পিটিশনে ফরাসি ভক্তদের কান্না বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। ভ্যালেন্টিন দাবি করেছেন যে ফরাসিদের কান্না থামানো উচিত এবং বোঝা উচিত যে মেসি সেরা এবং এমবাপ্পে তার ছেলের সমান। বিশ্বকাপ শেষ হতেই আবার শুরু হতে চলেছে ক্লাব ফুটবলের মৌসুম। এর পরও মেগা টুর্নামেন্ট নিয়ে বিতর্কের ঝড় থামছে না।
তবে এ বিষয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, ফ্রান্সের তরফ থেকে যতই মেসির গোল বাতিলের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগুক না কেন। যে ফলাফল হয়েছে, সেটা কোনভাবেই রদবদল করা সম্ভব নয়। ফিফার নিয়ম ভঙ্গ করে বেঞ্চে থাকা আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা যেমন নিয়ম ভঙ্গ করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে ফ্রান্সের বেঞ্চে থাকা ফুটবলের নিয়ম ভঙ্গ করেছে। এমনটি রেফারি জানালেও রেফারির উচিত ছিল দুটি গোলই বাতিল করা।