চোখের সামনে বাবা-মায়ের অপমানিত হতে দেখে গত বছর চারেক আগে’ই ‘আ”ত্ম”হ’ত্যা’ করেন অরিত্রী। তাকে হারানোর এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো যেন কাটেনি শোকের রেশ। প্রতিনিয়ত তার কথা ভেবে চোখের পানি ফেলছেন তার বাবা-মা।
এদিকে এ বিষয়ে অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর, চার বছর হলো অরিত্রী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, অরিত্রির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়। মামলা শেষ হয়েছে। এখন দেখা যাক আদালত কী করে। আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা-মায়ের অপমান সইতে না পেরে মেয়েটি ‘আ”ত্মহ”ত্যা” করে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে শেখ ছামিদুল ইসলাম। গত ২৭ নভেম্বর মামলার শেষ তারিখ ধার্য ছিল। ওইদিন মামলার শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার আসামিদের আইনজীবী জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর বিচারক অভিযুক্তের পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন ধার্য করেন ২৫ জানুয়ারি।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, “তারা (শিক্ষকরা) যদি আমাদের আলাদাভাবে ডেকে কথাগুলো বলতেন, তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকে হারাতে পারতাম না।” মেয়েকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে তার সঙ্গে যারা খারাপ ব্যবহার করেছে,, অন্যায় আচরণ করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে; যাদের জন্য তাকে অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য লড়াই করব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাবিনা আক্তার (দীপা) বলেন, “এটি একটি বিতর্কিত মামলা। শিক্ষকদের দ্বারা অভিভাবকদের অপমান করা হয়েছে। সেই অপমান সইতে না পেরে অরিত্রিকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অরিত্রীর বাবা-মা তাদের মেয়ে’কে হারিয়েছেন। আমরা অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করছি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে। আমরা চাই এই রায়ের মাধ্যমে মামলাটি নজির সৃষ্টি করুক। যাতে এভাবে কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে অপমান করতে না পরে এবং যাতে কোনো অরিত্রীকে ‘আ”’ত্ম”হ”ত্যা” করতেনা হয়।’
২০১৯ সালের ২০ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে বরখাস্তের আবেদন করেন।
চার্জশিটভুক্ত দুই শিক্ষক হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিন্নাত আরা। ১০ জুলাই, টো১৯ তারিখে, আদালত প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস এবং শাখা প্রধান জিনাত আখতার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
এদিকে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে এ ঘটনায় উক্ত স্কুলের তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। এখন শুধু এ মামলার সঠিক বিচারের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তার পরিবার।