বাংলাদেশের বেশ জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতশিল্পী শারমিন আকতার। ‘আমি সাজাব তোমারে’ এ গানটির মধ্য দিয়ে ভক্তদের মাঝে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তবে বর্তমানে তেমন একটা ভালো নেই গুণী এই তারকা। জানা যায়, টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে রোববার (২১ নভেম্বর) তার বাবা বাউল শিল্পী হুমায়ুন কবির কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, মেয়ের শারীরিক অবস্থার খবর। বললেন, ‘জীবনে কিছু চাইনি। তেমন অর্থ বিত্তও নেই। শুধু চেয়েছি আমার মা টা গানের মধ্যে বেঁচে থাকুক। সেই মা আজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শারমিনের অবস্থা আর একটু খারাপ হলেই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে না।’
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির আগে দুই দিন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ছিলেন শারমিন। মূলত জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হোন তিনি। ডেঙ্গু টেষ্ট করালে রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। তবে জ্বর না কমায় সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। চ্যানেল আইয়ের ইবনে হাসান খানের কাছে বিষয়টি জানালে তার যোগাযোগে শারমিনের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। সেই থেকে ১৪ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে শারমিনের।
এই ১৪ দিনে মাঝখানে দুইদিন অবস্থা একটু ভালোর দিকে আসে। এরপর আবার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শারমিনের বাবা বলেন, ‘শারমিনের রক্তের সেল নস্ট ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে। তার শরীরে নতুন করে রক্ত উৎপাদন হচ্ছে না বলেই দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। গত ৯ দিন হাসপাতালের বেডে একই অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো উন্নতি হচ্ছে না।’
আগামী দুই দিন যদি শারমিনের অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর বা ভারতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জালেন হুমায়ূন। তবে এ জন্য যত অর্থের দরকার তা তার কাছে নেই। কেউ যদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন সেটা তিনি সাদরে গ্রহণ করবেন বলে জানালেন। একই সঙ্গে মেয়ের জন্য দোয়া চাইলেন সবার কাছে।
হুমায়ূন কবির বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে শারমিনের চিকিৎসার কোনো কমতি হচ্ছে না। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে তো চিকিৎসকদেরও কিছু করার থাকে না। তারপরও আগামী দুই তিন দিন দেখার পর অবস্থা ভালো না হলে সিঙ্গাপুর বা ভারতে নিয়ে যেতে চাই। তবে আমরা তো বাউল গানের পরিবার। জীবনে টাকার লোভ কখনও ছিলো না। টাকার পেছনে ছুটিনি। আর্থিক কষ্টও ছিলো না পরিবারে। কিন্তু জীবনে এতো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো তা কে জানতো! দুই বছর করোনার কারণে কোনো শো’ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, কেউ যদি আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করতে চান তা সাদরে গ্রহণ করবো।’
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ২০ বছর বয়সী শারমিন আকতার বাবা-মার সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডায় বসবাস করেন। শারমিনের দাদা গান গাইতেন। বাবা গান লেখেন, সুর করেন। পছন্দ করেন গাইতেও। ফলে গানটা শারমিনের রক্তে। বাবা-দাদার পথ ধরেই গাইছেন মাটির গান, প্রাণের গান, বাংলা গান। বাবা যেমন শত কষ্টেও হাল ছাড়েননি, কন্যাও পিছিয়ে থাকেনি।
২০১৬ সালে চ্যানেল আই বাংলার গানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন শারমিন আকতার। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে কোটি কোটি দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে হয়, তা হয়তো তার থেকে ভালো কেউ বুঝতো না। কিন্তু আজ তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছেন হাসপাতালের বেডে।