Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মুম্বাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি জাহাজে নাবিক রাশেদের রহস্যজনক প্রয়ান

মুম্বাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি জাহাজে নাবিক রাশেদের রহস্যজনক প্রয়ান

প্রয়ান কার কোথায় লেখা আছে সেইটা কেহই জানে না। মানুষ জীবনের তাগিদে পারি জমায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সবাই চায় ভালো একটা অঙ্কের অর্থ আয় করতে। পড়ালেখা শিখে তাই অনেকে পরিবার ছেড়ে দূরের দেশে যায় কাজ করতে। সম্প্রতি নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে কর্মরত জাহাজে মারা যান নাবিক রাশেদ।

মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি জাহাজে ‘রহস্যজনক প্রয়ানের’ শিকার আবু রাশেদের (২২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১১ জুন) সকালে যশোরের মণিরামপুরের মনোহরপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আবু রাশেদ উপজেলার কুমারঘাটা গ্রামের আব্দুর সবুর সরদার ও পারুল বেগমের ছেলে মো. বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪০তম ব্যাচের ছাত্র রাশেদ এমভি জাহাজ মনি গত মার্চে ডেক ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ৩০ মে, তিনি ভারতীয় মুম্বাই বন্দরের জলে নোঙর করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে সেখানে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে সকালে তিনি প্রয়াত হন।

তার স্বজন, সহকর্মী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জাহাজে থাকা অবস্থায় দুই মাস শারীরিক ও মানসিকভাবে নি/র্যাতিত হওয়ার পর হাসপাতালে প্রয়াত হন রাশেদ। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুম্বাই থেকে তার নিথর দেহ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে স্বজনরা নিথর দেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

শনিবার সকালে রাশেদের নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছার পর মা-বাবা ও স্বজনদের কান্নায় উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবেশ। পরে সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ঈদগাহে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এটি মাটিতে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে ঝুলন্ত শামিয়ানা। উঠান ভর্তি চেয়ার। কেউ রাশেদের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেঁদে কেঁদে কেঁদে ফেটে পড়া রাশেদের গর্ভবতী মাকে তেল-পানি দিচ্ছেন কেউ।

রাশেদের বাবা সবুর সরদার বলেন, বাবা কি ব্যাপার? মুখে বা শরীরে কোনো চিহ্ন ছিল না। এখন সারা শরীরে দাগ। আমি বিচার চাই।

কাঁদতে কাঁদতে রাশেদের মা পারুল বেগম বলেন, প্রয়ানের আগের দিন আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখনও এটা আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল। কিন্তু তার কন্ঠস্বর দেখে বুঝতে পারলাম সে ভালো নেই। আমাগকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। দোতলা বাড়ির ডিজাইন করেছেন। এবার ঈদের পর বাড়িতে এসে বাড়ি বানানোর কথা ছিল তার।

রাশেদের বড় ভাই রাসেল পারভেজ বলেন, “একমাস আগে রাশেদ আমাকে ডেকে বলে, ‘ভাই, আমার খুব জ্বর আছে। ওরা আমার চিকিৎসা করছে না। অসুস্থর ছুটি চাইলে, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আমাকে অসুস্থ করে তুলছে। দেখুন তো। কোনোভাবে আমার জন্য ছুটির ব্যবস্থা করা যায়। রাশেদ এমভি জাহান মনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে তারা বলেন, ‘তোমার নিথর দেহ এই জাহাজ থেকে যাবে, ছুটি হবে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, রাশেদ জাহাজের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে তাকে ছুটি না দিয়ে আরও ওভারটাইম দিতেন। বিভিন্ন ইঞ্জেকশন দিয়েছেন। ইনজেকশন দেওয়ার ফলে আমি রক্ত ​​বমি করতাম। তার শরীরের অবনতি হওয়ার সাথে সাথে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি আর কখনও বাঁচবেন না। তাই তিনি গ্রামে তার আত্মীয়দের ডেকে ক্ষমা চান। আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টুটুল জানান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৩১ মে তাকে মুম্বাইয়ের জেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাশেদের মরদেহ গ্রামে আনা হয়। তিনি রাশেদের পরিবারকে কোম্পানির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, রাশেদের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম। মায়ের বুক খালি করে রাশেদ আজ পারি জমিয়েছে না ফেরার দেশে। রাশেদের এমন অকাল প্রয়ানে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে তার পরিবারের স্বজনরা।

About Shafique Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *