দেশের অন্যতম সমালোচিত বিষয় সদ্য সমাপ্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নকল সন্দেহে হুমাইরা ইসলাম ছোয়া নামে এক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ছেঁড়ার অভিযোগ। এতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখার পর অবশেষে মুখ খুললেন অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলাম।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২৩ নম্বর কক্ষে কী ঘটেছিল বলে জানান ডা. নাফিসা। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি।
ডা. নাফিসা বলেন, ওই দিন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ওএমআর ফরম ছিঁড়ে যাওয়া বা বৈদ্যুতিক ডিভাইস পাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর চেহারা আমার মনে নেই। তবে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আবারও সেই হল পরিদর্শনে গিয়ে নিশ্চিত হয় আমি হলের ওই প্রান্তেই যায়নি। ওই খাতায় আমার স্বাক্ষরও নেই।
তিনি বলেন, ওই দিন খুবই স্বাভাবিক পরিবেশে ৮২৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওএমআর ছিঁড়ে যাওয়া তো দূরের কথা, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমন অভিযোগে আমি খুবই বিরক্ত।
অভিযুক্ত পরিদর্শক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১০টায় কক্ষ আটকে দিয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গণনা করা হয়। ওই দিন হল সুপার গণনা করেন ১০৬ জন পরীক্ষার্থী। অনুপস্থিত ছিলেন ২ জন। পরীক্ষা শেষে খাতা হিসাব করা হয়েছে। কোনো যন্ত্র পাওয়া গেলে বা এরকম কিছু হলে সুপার সাধারণত কন্ট্রোল রুমকে তা জানিয়ে দেন। কিন্তু সেদিন আমার রুমে তেমন কিছু ঘটেনি। আমরা ভাল পরীক্ষা নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। আমাকে যতটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটা পূরণ করেছি।
তিনি বলেন, ওই দিন একজন শিক্ষার্থীও ভুল করেননি, ফলে ওএমআর শিটও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়নি। তার খাতায় আমার সাইন নেই; থাকারও কথা না। কারণ, ওই সাইডে অভিযোগকারীর রোলও পড়েনি।
ডা. নাফিসা বলেন, নিজেকে আমি আড়াল করিনি। এটা আমার দুর্ভাগ্য। আমাকে তারা যে নম্বরে ফোন করেছেন, পরিদর্শকের তালিকায় আমার যে নম্বর ছিল, সেটা টাইপিং মিসটেকজনিত ভুল ছিল। পরে এ বিষয়ে হল সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া আমি নিয়মিত হাসপাতালেও যাচ্ছি। কিন্তু হাসপাতালে আমাকে যে বিভাগে খোঁজা হয়, আমি সেই বিভাগে ছিলাম না। আমার প্লেসমেন্ট ছিল অন্য জায়গায়। আমার নামটা সরাসরি চলে আসায় আমার সন্দেহ হয়েছিল যে আমার নামে কিছু ছড়াতে পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমি ফেসবুক ডিঅ্যাকটিভেট করি।
এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন অভিযোগকারী। বলা হয়, নারী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র ছিল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র (শেখ কামাল ভবন, অষ্টম তলা)। পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বনের সন্দেহে একজন পর্যবেক্ষক ওই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন। পরে পর্যবেক্ষক তার ভুল বুঝতে পেরে নতুন ওএমআর শিট দেয়। কিন্তু পরীক্ষার আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পরিদর্শক তাদের পরীক্ষার সময় বাড়ায়নি।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সন্দেহে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। সঠিক তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। তারা বলেন, এ হলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কি হুমাইরার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা?