দেশে বহুল আলোচিত সেই ক্যসিনো কান্ড করা আলোচিত সমালোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট জামিনে মুক্ত হওয়ার তিন দিন পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেই দলবল নিয়ে রাজপথে বড় ধরনের মহড়া দিয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান তিনি। তাঁর গাড়ির সামনে ছিল মোটরসাইকেলের বহর। অনেক কর্মী-সমর্থক ছিলেন পিকআপে।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পৌঁছান সম্রাট। এর আগে বেলা আড়াইটায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে সেখানে। বেশির ভাগ মোটরসাইকেলে চালকসহ আরোহী ছিলেন তিনজন। তাঁদের প্রায় কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। সম্রাট ৩২ নম্বর সড়কে ঢোকার আগে তাঁর অনুগত কর্মী-সমর্থকেরা একসঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন।
সম্রাটের অনুগত হাজারো কর্মী-সমর্থকের মহড়ার কারণে ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও গতকাল দুপুরের পর প্রায় তিন ঘণ্টা ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারসহ আশপাশের সড়কে যানজট ছিল।
গত সোমবার রাতে জামিনে মুক্ত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাট। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কারাগারে না থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জামিন পাওয়ার পরও গত তিন দিন তিনি হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন। আজ হাসপাতাল থেকে প্রথমে শান্তিনগরে তাঁর মায়ের বাসায় যান সম্রাট। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটছবি: শুভ্র কান্তি দাস
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মগোপনে চলে যান সম্রাট। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানী ঢাকায় যে অভিযান পরিচালনা করে, তা আওয়ামী লীগে ‘শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে পরিচিতি পায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আটক করা হয় সম্রাটকে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযাগে মামলা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং ও অস্ত্র আইনের মামলায় আগেই জামিন হয় তাঁর। সর্বশেষ সোমবার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন হলে রাতেই মুক্তি পান তিনি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগপর্যন্ত সম্রাট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। যুবলীগের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তখন বিবেচনা করা হতো তাঁকে।
সম্রাটকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও আজ তাঁর মহড়ায় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন, সরোয়ার হোসেন, হারুনুর রশিদ, নাজমুল হোসেন, কামাল উদ্দিন খান, মহসিন মাহমুদ, মজিব মহসিন, আলী আকবর, মুরসালিন আহমেদ, খোরশেদ আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমেদ, ওমর ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সম্রাট বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। তাঁর কর্মী হিসেবেই কাজ করে যাবেন।
উল্লেখ্য, রাজধানীতে চাদাবাজি, মাদক এবং নিষিদ্ধ ক্যসিনো করমকান্ড চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, তিনি মুলত যুবলীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তবে তাকে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল