সাড়ে তিন মাস পর কারামুক্ত হয়ে চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রথমে বের হয়ে আসেন তিনি। এর ৪ মিনিট পর আসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল কারাগার থেকে বের হলে নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। কর্মীরা নেতাদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়ের ভয় নাই, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘আমীর খসরু ভাই এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে’, মহাসচিবের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি, খসরু ভাইয়ের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি’, ‘জিয়া, খালেদা, তারেক জিন্দাবাদ জিন্দবাদ’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব হাত তুলে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, ইনশাআল্লাহ এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে।
পরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। দেশে গণতন্ত্র না ফিরলে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আনা পর্যন্ত এ সংগ্রাম চলবে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু, শামীমুর রহমান শামীম, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, শায়রুল কবির খানসহ কয়েকশ নেতাকর্মী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে উপস্থিত ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তির সময় বিএনপি মহাসচিবকে আনতে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম, বিএনপি মহাসচিব ইউনুস আলীর ব্যক্তিগত সহকারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি ও খসরুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ছাড়া বাকি সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়েছেন। বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। বিভিন্ন মামলায় জামিনের আদেশ, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের নির্দেশে দুই নেতার আইনজীবীরা বিকালে মুক্তি পান বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ওইদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হলে পাশের কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ ও দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দেয়, আরও কয়েক ডজন গাড়ি ভাঙচুর করে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে। দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সংঘর্ষে যুবদলের মুগদা থানার ৭নং ওয়ার্ড নেতা শামীম মোল্লার নিহত হয়েছেন।