Friday , November 22 2024
Breaking News
Home / opinion / মিয়ানমার সীমান্তে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কী করা উচিত, জানিয়ে দিলেন সাবেক ব্রীগেডিয়ার জেনারেল সামস্

মিয়ানমার সীমান্তে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কী করা উচিত, জানিয়ে দিলেন সাবেক ব্রীগেডিয়ার জেনারেল সামস্

সম্প্ৰতি বাংলাদেশে সীমান্তে বেশ হুলস্থূল কান্ড বাধাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের ছুড়ে দেয়া অনেক গুলি আর মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশে। যার কারনে সীমান্তে বসবাস করা মানুষেরা রয়েছে অনেক আতংকে। আর এই কারনে বাংলাদেশ এর এখনই কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত টা জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রীগেডিয়ার জেনারেল সামস্। তিনি এ নিয়ে লিখেছেন একটি কলাম। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই কলাম তুলে ধরা হলো হুবহু :-

প্রায় এক মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমন্ত সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খই মং সেক পার্বত্য অঞ্চলে রাখাইন সেনাবাহিনী ও মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এই যুদ্ধের ফলে কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো লাইন ধরে সীমান্তের ওপার থেকে ভারী অস্ত্রের গোলা আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে পাহাড়ের পাদদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে মর্টার শেল বিস্ফোরণে ছয় রোহিঙ্গা আহত হয়। আহত মো: ইকবাল নামে এক কিশোর পরে মারা যায়। বিরতিহীন গোলাবর্ষণ এবং মর্টার গোলাগুলি সেদিন সন্ধ্যায় শুরু হয় এবং ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে। এতে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর তিন দিন আগে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে একটি রকেট শেল নিক্ষেপ করা হলে সেই শেল বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠলে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সর্বশেষ ঘটনায় কিশোর ইকবালের মৃ’ত্যু’র ‘পর বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মিয়ানমার কখনো তার কথা রাখে না। আমাদের পক্ষ থেকে না হলে আমি জাতিসংঘে অভিযোগ করব।’ সীমান্তের ওপারে রাখাইন সেনাবাহিনী ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। কৃষকরা মাঠে যেতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না। চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ।

বাংলাদেশের মাটিতে যে মর্টার শেল পড়েছিল সেটি ৮২ মিমি মর্টার শেল বলে মনে হয়। যখন একটি 82 মিমি মর্টার থেকে একটি শেল নিক্ষেপ করা হয়, তখন শেলটি 3,৮০০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সে হিসেবে বলা যায়, দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। প্রশ্ন হল, এই গুলি কে ছুড়েছে? আরাকান সেনাবাহিনী নাকি মিয়ানমার সেনাবাহিনী? তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে হেলিকপ্টার থেকে যে রকেট শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। কারণ আরাকান আর্মির কোনো হেলিকপ্টার নেই। মিয়ানমারের এই হেলিকপ্টারটি বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে আরাকান সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলাবর্ষণ করেছে। সে হিসেবে বলা যায়, সীমান্তের জিরো লাইন থেকে দুই থেকে তিন কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ এলাকায় মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। সীমান্ত এলাকায় এত বড় আকারের যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার প্রতিধ্বনি সীমান্ত পেরিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে টার্গেট করেছে তা বলা সঠিক বলে মনে হয় না। উল্টো তাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় মনে হয়, আগুন লক্ষ্যবস্তু থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে।

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে রাখাইন রাজ্য মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তবে কখন এবং কীভাবে তা দেখার বিষয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া আরাকান সেনাপ্রধান জেনারেল তোয়াই মরা নাইং-এর বক্তব্যই যথেষ্ট। তিনি দাবি করেন, রাখাইনের ৬০ শতাংশের বেশি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি আরও দাবি করেন যে তারা ইতিমধ্যে ওইসব এলাকায় তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। বিচার বিভাগ ও কর ব্যবস্থাপনাও গড়ে তোলা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা নতুন পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। যদি তার বক্তব্যের পঞ্চাশ শতাংশও সত্য হয়, তাহলে বলা যায় রাখাইনের ওপর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণ আর নেই। এ কারণে মিয়ানমার বাহিনী রাখাইনে তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষ চলছে।

২ সেপ্টেম্বর, আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনের মাংডুতে একটি পুলিশ চৌকিতে হামলা করে, ১৯ জন জান্তা পুলিশকে হত্যা করে এবং চেকপয়েন্ট দখল করে। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। জবাবে, মায়ানমার বাহিনী ৩ সেপ্টেম্বর মংডুতে তিনটি বিমান হামলা চালায়। দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার হামলায় অংশ নেয়। বিমান হামলার পর, মিয়ানমার সরকার বলেছে যে তাদের সেনারা নিরাপত্তা পোস্ট পুনরুদ্ধার করতে অগ্রসর হচ্ছে। নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর আরাকান আর্মি ওই এলাকায় এবং প্রতিবেশী চীনের পালেতোয়াতে মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছয়টি সীমান্ত ঘাঁটির আশপাশে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার দিয়ে নিয়মিত বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ শেল ছোড়া হচ্ছে। আরাকান আর্মি দাবি করেছে যে ২শে সেপ্টেম্বর পালেতওয়ারের মিক ওয়া গ্রামের কাছে একটি এনকাউন্টারে ১০ মায়ানমার আর্মি কর্মী নিহত হয়েছে। এছাড়াও, ৩ সেপ্টেম্বর, আরাকান আর্মি মায়ানমার আর্মি গাড়ির একটি কনভয়কে অ্যামবুশ করেছিল একটি হাইওয়েতে একটি শহর এলাকায়। রাখাইনে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সেনা।

প্রায় এক শতাব্দী আগে, আরাকান আর্মি রাখাইন থেকে ২৬ জন তরুণ বৌদ্ধ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, এর সদস্যরা ছিল শ্রমিক যারা ভাগ্যের সন্ধানে উত্তরের খনিতে কাজ করতে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তারা তাদের প্রশিক্ষণের জন্য চীনের সীমান্তবর্তী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির দখলে থাকা একটি এলাকা বেছে নিয়েছিল। যত দিন যাচ্ছে, সংগঠনের প্রসার ঘটছে। সেই হারে জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। বর্তমানে, তাদের কর্মী সংখ্যা প্রায় ২০,০০০। তাদের মূল লক্ষ্য আরাকানি জনগণের পরিচয় রক্ষা করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের জনগণের ব্যাপক সমর্থনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাখাইনের জনগণের এমন সমর্থন পেয়ে তারা রাখাইন রাজ্যে তাদের সাবেক স্বাধীন রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

বর্তমান রাখাইন রাজ্য এক সময় আরাকান নামে পরিচিত ছিল। এখানকার প্রধান জনসংখ্যা আরাকানি। ধর্ম অনুসারে তারা থেরবাদ বৌদ্ধ। তবে তারা নিজেদেরকে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের বৌদ্ধদের থেকে আলাদা বলে দাবি করে। আরাকান এক সময় একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। স্বাধীন আরাকান দীর্ঘকাল বিদ্যমান ছিল। ১৭৮৪-৮৫ সালের যুদ্ধে আরাকান তৎকালীন বার্মার অধীনস্থ হয়। তারপর পুরো বার্মা চলে গেল ব্রিটিশদের হাতে। আরাকান তখন ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশ। ১৯৪৮ সালে বার্মা বা মায়ানমারের স্বাধীনতার পর, আরাকান বা রাখাইন নতুন ফেডারেল রিপাবলিকের একটি অংশ হয়ে ওঠে। রাখাইন তেলসহ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে রাখাইনের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। আরাকান আর্মি এই বিপর্যয় দূর করতে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি রাখাইনের সেনাপ্রধান জেনারেল তোয়াই মরা নাইং বলেছেন, “ধর্ম কোনো ব্যাপার নয়, রোহিঙ্গারা জন্মসূত্রে মিয়ানমারের নাগরিক।” তিনি সরাসরি বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। আমরা রোহিঙ্গাদের রাখাইনের মুসলিম অধিবাসী বলে মনে করি। আমরা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিই, শুধু বাসিন্দা নয়। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আমরা যথাযথ প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের কাছে এখন দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার। প্রথমত, সীমান্তের ওপার থেকে যে কোনো ভারী কামানের গোলাবর্ষণের দায় মিয়ানমারকে নিতে হবে, তা অনিচ্ছাকৃত হোক বা লক্ষ্যবস্তু করা হোক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? দ্বিতীয়ত, আরাকান সেনাপ্রধান, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশ কি আদৌ সাড়া দেবে?

বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং ভারী অস্ত্রের গোলাবর্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একাধিকবার তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। তারপরও যেহেতু গোলাবর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না, তাই বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্থাপন করা উচিত। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি জাতিসংঘে জানানোর কথা বললেও এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ চীনের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে আরাকান সেনাপ্রধান জেনারেল তোয়াই মরা নাইং বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশকে বুদ্ধিমত্তা দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘পাবলিকলি’ সাড়া দেওয়ার দরকার নেই। কারণ আরাকান আর্মি কোনো স্বীকৃত সংগঠন নয়। ‘প্রকাশ্যে’ জবাব দিলে চীনের পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে, একটি জাতি যখন তার অস্তিত্ব রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তখন পৃথিবীর কোনো জাতি তা দাবি করতে পারে না। পাকিস্তানি জান্তা যেমন বাঙালিদের আটকে রাখতে পারেনি, তেমনি মিয়ানমারের জান্তা রাখাইনদের ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।

প্রসঙ্গত ,এ দিকে সরকার থেকে বার বার এ নিয়ে জানানো হচ্ছে সতর্ক বার্তা। মিয়ানমারকে তারা করছে সতর্ক। সেই সাথে তারা জানিয়েছে এরপর বাড়াবাড়ি না থামলে তারা এ বিষয়টি অবগত করবে জাতি সংঘের কাছে।

About Rasel Khalifa

Check Also

যে কারণে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে বললেন সাংবাদিক ইলিয়াস

বিশিষ্ট সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২০ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *