সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে সারাদেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অন্যদিকে সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজনের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ভয় কাটেনি। বর্ডার এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গিয়েছে। এসকল বিষয় নিয়ে এবার বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থান জানিয়ে দিল প্রায় সকল দেশের মিশন প্রধানদের।
জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তে গু/ লিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে প্রায় সব দেশের মিশন প্রধানদের ঢাকায় ডেকেছিল সরকার।
মঙ্গলবার সকালে পদ্মা স্টেট গেস্ট হাউসে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে সকল আসিয়ান দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল খুরশেদ আলম সীমান্ত উত্তেজনার বিষয়ে তাদের ব্রিফ করেন। এর আগে সোমবার তিনি আসিয়ানের সাতটি দেশের মিশন প্রধানদের একই ধরনের ব্রিফিং দেন।
মঙ্গলবার মিশন প্রধানদের ব্রিফ করার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আজ যারা এসেছেন, অন্য রাষ্ট্রদূতদেরও আমরা একই কথা বলেছি, আমরা রো/ হিঙ্গাদের নিয়েছি পাঁচ বছর হয়ে গেছে, তারা আজ পর্যন্ত একটিও রো/ হিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্য ধরে কাজ করছি।
“আসলে, আমরা ধৈর্যের সাথে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করিনি যার জন্য আমাদের সীমান্তের ভিতরে থাকা আমাদের লোকেরা তাদের গরু-বাছুর নিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, তাদের ধানক্ষেতে যেতে পারবে না, তাদের ঘরে থাকতে পারবে না। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।
এ কারণে, আমরা তাদের বলেছি যে আমরা আপনার সাহায্য চাই যাতে মিয়ানমার এই অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করে এবং ভবিষ্যতে সুবিধা না নেয়, যাতে এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া না হয়।”
আরাকান আর্মি ও আরসাকে আবারও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডেকেছে মিয়ানমার
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ যে ‘অত্যন্ত ধৈর্যের’ সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে কোনোভাবেই জড়াতে চাই না, যাতে এখানে জড়িয়ে পড়লে মিয়ানমার সুযোগ পায়, রো/ হিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার অজুহাত পায়, আমরা এমন কোনো অজুহাত দিতে চাই না। এই মুহূর্তে মিয়ানমারে।
কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব বলেন, “তাদের মতামত, তারা খুব প্রশংসা করছে… আমরা যে চরম ধৈর্য্য প্রদর্শন করছি এবং আমরা পা রাখছি না। কোনো উসকানিতে, মিয়ানমারের কোনো উসকানিতে পা দেওয়া নয়।
“এবং তারা বলেছিল, তারা এই বিষয়গু/লি তাদের রাজধানীতে রিপোর্ট করবে এবং যাতে ভবিষ্যতে যদি কিছু করার থাকে, বিশেষ করে যদি জাতিসংঘে কিছু করার থাকে, তারা সে বিষয়ে তাদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। “
মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে গোলা পাঠাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নৌবাহিনীর সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “এটা আমাদের অবস্থানের বিষয় নয়। স্বেচ্ছায় বা যাই বলি না কেন, এটা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে। তাই মিয়ানমার সরকারের উচিত। বুঝতে হবে, তাতমাদও (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী) বুঝতে হবে যে তারা কী করছে…
“পশ্চিমে বাংলাদেশ, দক্ষিণে মায়ানমার আর্মি, উত্তরে আরাকান আর্মি। সুতরাং, তাদের বুলেট কোনভাবেই বাংলাদেশে আসার কথা নয়, পশ্চিমে আসার কথাও নয়। ভৌগোলিকভাবে এটা হয় না, যদি কেউ এটা ইচ্ছাকৃতভাবে না করে।”
খুরশেদ আলম বলেন, “আমরা (ব্রিফিংয়ে) বলছি যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের এই সংঘাতে জড়ানোর এই প্রচেষ্টায় আমরা জড়িত হব না। আমরা আপনাকে জানিয়েছি যে আপনি যা উপযুক্ত মনে করবেন তা গ্রহণ করবেন।”
খুরশীদ আলম বলেন, আমরা সব পর্যায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
আমি শুধু বলতে পারি যে আমরা সব স্তরে যোগাযোগ করছি যাতে মিয়ানমার বুঝতে পারে যে এই ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা তাদের জন্য বিপজ্জনক, বাংলাদেশ এটি সঠিকভাবে মেনে নেবে না।
সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা ভেতরে গু/লি করছে, সেটা অন্য কথা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সাথে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ সরকার। ডাকে সাড়া দিয়ে পরেরদিনই পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এসে হাজির হয় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ও দুই সহযোগী। সেখানে তাদের সাথে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হয়। এক পর্যায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায় মায়ানমারে রাষ্ট্রদূত ও তার সহযোগীরা।