মিশেল ব্যাচেলেট হলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশে এসে তিনি দেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করছেন এবং সেই বৈঠকে উঠে আসছে বিভিন্ন সম্পর্কিত কথা। সম্প্রতি জানা গেছে বেসরকারি সংস্থা ‘মায়ের ডাক’ ছয় শতাধিক নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছে মিশেল ব্যাচেলেটের কাছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে বৈঠকে ছয় শতাধিক নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘মায়ের ডাক’। হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তাদের হিসাব-নিকাশ করা হয়েছে। তারা হাইকমিশনারকে একটি তালিকা দিয়েছেন।
হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান। সোমবার সকালে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ২০টির বেশি নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়-এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, পরিবেশ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, উর্দুভাষীদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের সম্মানিত নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সমাজকর্মী খুশি কবির, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার সিইও সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, পিপল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. শাহীন আনাম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন হারিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ড. হাইকমিশনার বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক শোনেন। ওই বৈঠকে ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এদেশে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর হিউম্যান রাইটসের ফেসবুক পেজ অনুযায়ী, “হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন যে আজ ঢাকায় সুশীল সমাজের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হয়েছে।” সুশীল সমাজের প্রয়োজন সুযোগ, সক্ষম পরিবেশ এবং মানবাধিকার চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরণ ও মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বৈঠক শেষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করছি, আমরা আমাদের কথা তুলে ধরেছি।’
সমাজকর্মী খুশি কবির বলেন, “সবাইকে সব সেক্টরে মানবাধিকারের অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা যেমন ভালো দিকগুলো বলেছি, তেমনি আমাদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, কী করা দরকার- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। খুব স্পষ্ট ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’
বেলার সিইও সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, মানবাধিকার, সুশাসন ও গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কাজ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি বলেন, “আমি কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার যে ভূমিকা আছে সেগুলো তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, “এখানে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকেই এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তার কথা বলেছেন। পরিবেশের কথা বললাম। সুশাসন এসেছে। জবাবদিহিতা এসেছে। ‘
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উর্দুভাষী প্রতিনিধি খালিদ হোসেন। এদেশে উর্দুভাষীরা পাসপোর্ট পাচ্ছেন না- বৈঠকে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মানবাধিকার কর্মীরা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানকে ‘গুম’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অবহিত করেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়।
মাদারস কলের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি এএফপিকে বলেন, “আমরা বলেছি যে এটি (বাংলাদেশ) এখন একটি পুলিশ রাষ্ট্র, জনগণের রাষ্ট্র নয়। তিনি আরও বলেন, “আমরা বলেছি যে 600 জনের বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা। ‘
উল্লেখ্য, বৈঠকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ‘নিখোঁজ’ নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মিশেল ব্যাচেলেট গত রোববার ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সরকারের মন্ত্রীরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগের জবাব দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে ‘এনফোর্সড ডিস-অ্যাপিয়রেন্স’ বা ‘গায়েব’ বলে কিছু নেই। সরকারের কাছে তথ্য এসেছে ৭৬ জন নিখোঁজ। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন। বাকিদের অনেককে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মানুষ জঘন্য অপরাধ করে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণের কারণে দেউলিয়া হয় এবং পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা
গতকাল বিকেলে ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন হাইকমিশনার বাশেলেট। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. শাহরিয়ার আলম জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানকে স্বাগত জানান। তাকে দেখালেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের চারপাশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। এদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষের বিপদে আপদে তিনি এক মুহূর্তও বসে থাকতে পারেননা। সাধারণ মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।