বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের দলকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপির সম্মেলন শুরু করেছে। তবে সেখানেও নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনেক বিএনপি নেতাকর্মীরা সংগঠনের বিধিমালা উপেক্ষা করে নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যেটা কোনোভাবেই দলগত বিষয়ে কল্যাণ হতে পারেনা, এমনটা জানিয়েছেন বিএনপির অনেক নেতা। এবার অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে মামলা ঠুকে দিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলনের ফলাফল বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ সাত নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে চাঁদপুর সদরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রাফিউস শাহাদাত ওয়াসিম পাটোয়ারী।
মামলার আসামিরা হলেন- চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সলিমুল্লাহ সেলিম, সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. শামছুল ইসলাম মন্টু, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া ও বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুল হক সাইদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ৩নং বিবাদী সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার মো. শামছুল ইসলাম মন্টু ঘোষিত ফল এবং বিজয়ী ১ ও ২নং বিবাদী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের ওপর স্থগিতাদেশ চান মামলার বাদী।
মামলার বাদী বিএনপি নেতা রাফিউস শাহাদাত ওয়াসিম পাটোয়ারী জেলা বিএনপির সম্মেলন বৈধ নয় বলে দাবি করেন। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন পদে একজন নির্বাচিত হতে পারেন না। তবে তা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। এ ছাড়া ওইদিন ১০টি ইউনিট নিয়ে সম্মেলন করেন তারা। অপরপক্ষ আরেকটি স্থানে (হাজীগঞ্জ) ১১টি ইউনিট নিয়ে সম্মেলন করেছে। তারা ১১টি ইউনিট উপেক্ষা করে এটি করতে পারে না। তাছাড়া জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটার ছিল মাত্র দেড় হাজার। কিন্তু তারা বেশি কাস্টিং ভোট দেখিয়েছেন। যারা প্রয়াতথয়েছেন তারা কিভাবে ভোট দিয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে অনিয়মের জোরালো প্রমাণ রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক আসামি না হলে মামলার কোনো যোগ্যতা নেই। আমরা মহাসচিবের কাছে বিচার চাইব। মামলা যেমন মোকাবিলা করতে হবে- তিনিই রায় দেবেন। প্রক্রিয়াগত কারণে মহাসচিবকে মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি বিএনপির দুই কমিটিতে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে কোনো কমিটিতে রাখেনি। দল স্বেচ্ছাচারিতায় কাজ করে না। গণতন্ত্রের চর্চা আমাদের দলে না থাকলে বাইরে গণতন্ত্রের কথা বলা কি হাস্যকর হবে না?
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিম মিয়া জানান, বাদীর মৌখিক বক্তব্যের আলোকে অভিযোগগুলো রেকর্ড করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চলতি বছরের ২ এপ্রিল জেলা বিএনপির সম্মেলনে ১৫১৫ জন কাউন্সিলর ছিলেন। এর মধ্যে ৯৮২ জন ভোট দিলেও ৮০৪ জন ভোট দেননি। যার কারণে বাদী পুরো সম্মেলন বাতিল করতে চান। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছে। এছাড়া আদেশের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত ২ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনের ফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচন ঘোষণার নির্দেশ চেয়ে এ মামলা করা হয়।
প্রায় এক শতাব্দী পর সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি পদে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সলিম উল্লাহ নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
অপরদিকে ওইদিন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মমিনুল হকের বাড়িতে সম্মেলন ঘোষণা করে ভোট দেন জেলা বিএনপির আরেক অংশ। সেখানে মমিনুল হককে জেলা সভাপতি ও মোস্তফা খান সাফরিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন বিঘ্নিত করার চেষ্টা করায় কেন্দ্র থেকে মমিনুল হককে কারণ দর্শাতে বলা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল নস্যাৎ করার লক্ষ্যে ওইদিনই মমিনুল হক পাল্টা কাউন্সিলিং করেন। তা ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ৩০ মার্চ চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেন তিনি। এসব ঘটনা চরম অসদাচরণ এবং সম্পূর্ণ দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
এই মামলার প্রধান বাদি রাফিউস শাহাদাত ওয়াসিম পাটোয়ারী হাজীগঞ্জে যে বিএনপি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মামুনুল হকের তিনি একজন খোদ অনুসারী এমনটিই জানা গেছে। তবে তার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিএনপি’র জেলা পর্যায়ের নেতাদের ভেতর। তারা জানিয়েছেন তার হঠাৎ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলোচনা করতে পারতেন বলেও তারা জানান।