২০২০ সালে ওসি প্রদীপ ও তার কয়েকজন সহযোগী মিলে আমার দুটি মেয়েকে তাদের অ’/স্ত্রের মুখে বাড়ি হতে নিয়ে যায়। এরপর তাদেরকে ঐ থানার ২য় তলায় বহুদিন ধরে আটকে রাখে ওসি প্রদীপ এবং তাদের সাথে খারাপ কাজ করে। পরে তাদেরকে নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে ফাসিয়ে দেওয়া হয় এবং জেলহা’জতে পাঠানো হয়। মেয়েরা বাড়ি ফিরে বেশ কয়েকবার আ’ত্মহন/নের চেষ্টা করে। রাশেদের ঘটনার মামলায় এক নারী সাক্ষ্য দিতে এসে বরখাস্ত হওয়া এবং আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি সিনহার ঘটনার মাম’লার ২০তম সাক্ষী। প্রশাসন ওসির পক্ষে থাকার কারনে তার বিরু’দ্ধে মামলা করার সাহস পাননি বলে দাবি করেছেন ওই ভু’ক্তভো’গী নারী। ওসি প্রদীপ যে সময় গ্রেফ’তার হলেন সেই সময়ে আদালতে তিনি খারাপ কাজের অভিযোগ এনে মাম’লা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি বর্তমানে পুলি’শ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।
সিনহার ঘটনার অন্যতম আ’সামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ টেকনাফ থেকে আরও বেশ কয়েকজন তরুণীকে নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে থা’নায় নিয়ে গিয়ে খারাপ কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভু’ক্তভো/গীদের অভিযোগ ছাড়াও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এই পু’লিশ কর্মকর্তার খারাপ কাজের সাথে সম্পৃক্ততার নানা উ’দ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, টেকনাফ থাকাকালীন ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীরা ৫০ জনের বেশি নারীকে ‘নিষিদ্ধ দ্রব্য কারবারি’ বলে বাড়ি থেকে তুলে এনে ক্র’সফা/য়ারের ভ’/য় দেখিয়ে খারাপ কাজ করেছে। যা তখন প্রদীপের ভ’য়ে কেউ বলার সাহস পাননি।
সিনহার ঘটনা পরবর্তী টেকনাফে প্রদীপ আমলের কথিত ব’/ন্দু’কযু’/দ্ধে ১৬১ জনকে হ’/’ত্যা ও ক্র’সফা’/য়ারের ভ’/য় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশব্যাপী তো’লপাড় সৃষ্টি হয়। ওই সময় ভু’ক্তভো/গীদের কেউ মাম’লা না করায় ধামাচাপা পড়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে খারাপ কাজের অভিযোগগুলো।
খারাপ কাজের শি’কার টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকার এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন, স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৪৫ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি প্রদীপ। তিন লাখ টাকা, ব্যবহারের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে থা’নায় যান তিনি। স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তিন দিন পর্যন্ত আটকে রেখে ওসি প্রদীপসহ কয়েকজন মিলে তার সাথে খারাপ কাজ করে। পরে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তাকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। পরদিন তার স্বামীর গু’/লিবি’দ্ধ নিথর দেহ পাওয়া যায়। ওই সময় খারাপ কাজের বিষয়ে মুখ খুললে পরিবারের সবাইকে শেষ করে দেওয়ার হু’মকি দেন প্রদীপ। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চুপ থাকেন তিনি।
ওসি প্রদীপের খারাপ কাজের শি’কার হওয়ার অভিযোগ করে টেকনাফের হৃীলার আরেক গৃহবধূ জানান, তার স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি করে স্থানীয় স’ন্ত্রা/’সী গিয়াস বাহি’নীর লোকজন। চাঁদা না দেওয়ায় একদিন সন্ধ্যায় এসআই মশিউর বাড়িতে এসে তাকে (গৃহবধূ) নিষিদ্ধ দ্রব্য কারবারি বলে ধরে নিয়ে যায়। পরে অ’জ্ঞাত স্থানে টানা তিন দিন আ’টকে রেখে ওসি প্রদীপ ও তার লোকেরা তাকে খারাপ কাজের পর মরিচের গুঁড়া দিয়ে অংগে পাশ’বি/ক নি’/র্যা’তন চালায়। এরপর নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে আদালতে চালান করে দেওয়া হয়। তার দাবি, একইভাবে প্রদীপের খারাপ কাজের শি’কার হয়েছে তাদের পরিবারের ছয় নারী।
উখিয়ার কোর্ট বাজারের নি’/র্যাতি’তা এক তরুণীর অভিভাবক জানান, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তাদের কলেজপড়ুয়া মেয়ে টেকনাফে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রেমিকসহ কয়েকজন মিলে তাকে খারাপ কাজ করে। বিষয়টি ওসি প্রদীপ পর্যন্ত গড়ায়। ওই সময় খারাপ কাজ করেছে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রদীপ নিজেও কয়েক দিন আ’টকে রেখে একাধিকবার খারাপ কাজের পর পর নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে ওই তরুণীকে কোর্টে চালান করে দেন।
অভিযোগ আছে, টেকনাফ হোয়াইক্যং এলাকার এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়ে অর্ধকোটি টাকা চাঁ’দা দাবি করেন ওসি প্রদীপ। টাকা দিতে না পারায় তিন দিন পর কথিত ব’ন্দু/কযু’/দ্ধের নামে তাকে নিথর করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে প্রয়াতের মেয়ে এবং বোন কক্সবাজার আদালতে যান। খবর পেয়ে ওই দুই না’রীকে তুলে নিয়ে যায় ওসি প্রদীপের লোকজন। তাদের থা’/নায় আ’টকে রেখে টানা পাঁচ দিন খারাপ কাজের পর নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে চালান দেওয়া হয়।
এদিকে ধামাচাপা পড়ে যাওয়া একাধিক খারাপ কাজের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করেন এই প্রতিবেদক। ভু’ক্তভো/গী নারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ করে পাওয়া যায় কক্সবাজার জেলা কা’রাগারের তৎকালীন মেডিক্যাল রাইটার হাজতি মো. ইউসুফকে। তিনি প্রদীপের কাছে খারাপ কাজের শিকার হওয়া অসংখ্য নারীকে কা’রা/গারে থাকাকালে চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান।
ইউসুফ জানান, ঘটনাক্রমে একটি মিথ্যা মাম’লায় ফেঁ’সে গিয়ে দীর্ঘদিন কা’রাভোগের পর ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কা’রাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট ও চিকিৎসার বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকায় তাকে কারা মেডিক্যালের রাইটার হিসেবে দায়িত্ব দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সেই সুবাদে কা’রাগারে থাকা সব রোগীর তিনি দেখভাল করতেন। তিনি আরও জানান, টেকনাফের ১৬ বছরের এক তরুণী তাকে জানিয়েছিল বাড়ি থেকে ধরে এনে তাকে থা’নায় ১৫ দিন আ’টকে রাখেন ওসি প্রদীপ। এ সময়ের মধ্যে একাধিকবার প্রদীপ তাকে খারাপ কাজ করেন। পরে আরও কয়েকজন পু’লিশ সদস্যও তাকে খারাপ কাজ করে। খারাপ কাজের পর প্রত্যেকবার অঙ্গে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নি’/র্যা’তন করা হয় তাকে। এ সময় যন্ত্র’ণায় চিৎকার করলে প্রদীপ ও তার সহযোগীরা উল্লাস করতেন বলে জানান ওই তরুণী। পরে তাকে নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে চালান করে দেওয়া হয়েছিল। কা’রাগারে এসে অসুস্থতার কারণে মৃ’/ত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তার বুকে-পিঠে অমানু’ষিক নি’/র্যাত’নের চিহ্ন ছিল।
একই রকমভাবে কারা’গারে নিয়ে আসেন টেকনাফ থা’নার রাঙ্গিখালী এলাকার এক তরুণীকে, ঐ তরুনী ইউসুফকে সেই সময় জানিয়েছিলেন, তাকে তার বাড়ি থেকে থা’নায় নিয়ে আসে এবং এক মাসেরও অধিক সময় ধরে তাকে নানা অভিযোগে আ’টকে রাখার মাধ্যমে ওসি প্রদীপ তার সাথে অনেকবার খারাপ কাজ করেছে। পরে তার অ’ঙ্গে মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দিয়ে নি’/র্যা’তন করা হয়। শেষ পর্যন্ত তার মা’মলা সাজিয়ে নিষিদ্ধ দ্রব্য দিয়ে চালান করে দেওয়া হয় এমন বর্ণনা শুনেছেন ইউসুফ। ইউসুফ বলেন, এই ভাবে কা’রাগারে আসা বহু নারী যারা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এসেছিল তারা প্রদীপের খারাপ কাজের বর্ণনা দিয়েছেন।
এএসপি খায়রুল আলম যিনি সিনহার ঘটনার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি বলেন, সিনহার ঘটনার মামলার তদন্তে নামার পর অনেক নারী অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের কাছে খারাপ কাজের শি’কার হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রদীপের বিরুদ্ধে নারীদের সাথে এই ধরনের খারাপ কাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই বিষয়টি নিয়ে আদালতে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আদালত যদি চান তাহলে এই বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে পারেন।