Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Entertainment / মিডিয়ার মানুষ সামনা সামনি অনেক কিছু বলে, আক্ষেপের সুরে এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী

মিডিয়ার মানুষ সামনা সামনি অনেক কিছু বলে, আক্ষেপের সুরে এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী

বাংলা সিনেমার আলোচিত অভিনেতা ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে আজও ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তিনি অভিনয় জগতে আজীবন বিচরন করছেন নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে। এভাবে গুনি শিল্পীরা তাদের কাজের মাঝে বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে। তাঁর মৃ/ত্যুর পর মিডিয়ার কেউ একটা ফোন করেও খোঁজ নেয়নি বলে মন্তব্য করে অভিনেতা স্ত্রী যে অভিযোগ করলেন।

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃ/ত্যুবরণ করেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। এ বছরের শুরুতে তাঁর প্রথম মৃ/ত্যুবার্ষিকীতে আক্ষেপ এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান বলেছিলেন, মানুষটা ম/রে গেলো, আর সাথে সাথেই তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলো। কেউ তাকে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করলেন না। দ্রুত সবাই তাঁকে ভুলে গেলো!’

আজ এই কিংবদন্তি অভিনেতার জন্মদিন। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তবে তার বয়স ৮২ বছর হত। এই বিশেষ দিনে কেমন আছে তার পরিবার? পরিবারের পক্ষ থেকে কি কোনো ব্যবস্থা আছে? জানতে ফোন করা হয় স্ত্রী রুনি জামানকে।

আক্ষেপ করে তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম বলেন, বিশেষ দিনে আর কী কী আয়োজন থাকবে। আমি নিজেও অসুস্থ। নানা রোগে ভুগছি। এখন ভালোয় ভালোই তাঁর (এটিএম শামসুজ্জামানের) কাছে চলে যেতে পারলেই হলো।’

রুনি জামান বলেন, এটিএম শামসুজ্জামান চলে যাওয়ার পর মিডিয়ার কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। পরিবার তো দূরের কথা এটিএম শামসুজ্জামানের কবরটাও কোনোদিন কেউ দেখতে আসেনি। তবে সাধারণ মানুষ এটিএম শামসুজ্জামানকে স্মরণ করে।তাদের অনেকেই কবরের পাশে আসেন। পাশ দিয়ে গেলেও কবর জিয়ারত করে যান।

বিষয়টি ভেবে এটিএম শামসুজ্জামানের মৃ/ত্যুর প্রথম বছর রুনি জামানের খারাপ লাগছিল। এখন আর খারাপ লাগে না। মিডিয়ার মানুষ তো বেঁচে থাকা অবস্থাতেও তেমন খোঁজ নেয়নি। তাই তাদের কাছে প্রত্যাশা করাটাও বোকামিই মনে করেন তিনি।

রুনি বলেন, ‘মিডিয়ার লোকজন সামনাসামনি অনেক কথা বলে। কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে গেলে সব ভুলে যায়। এখন আর তাদের কাছ থেকে একটা ফোন কলও আশা করি না। এমনকি এটিএম শামসুজ্জামান অসুস্থ ও জীবিত থাকাকালেও কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এখন মৃ/ত্যুর পর আমার দুঃখ করার কিছু নেই।’

জন্মদিন উপলক্ষে এফডিসি বা শিল্পীদের কেউ কি ফোন করেছিল? তিনি বললেন, ‘না, কেউ ফোন করেনি।’

হতাশা ও আক্ষেপ নিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু জন্মদিন কোনো দিনই মিডিয়ার কেউ ফোন করেন না। তারা এটিএমকে ভুলে গেছে। এখন তাদের মনে রাখাতেও কিছু যায় আসে না।’

রুনি জামান বলেন, ‘সারা জীবন দিয়ে গেলেন সিনেমার জন্য। নিজের স্বার্থে কিচ্ছু চিন্তা করেননি, নাটক সিনেমাকে সব দিয়ে গেলেন। অথচ তার মৃ/ত্যুর পর কেউ সামান্য খোঁজ খবরটাও নিলেন না। অন্তত নাটক সিনেমার মানুষরাতো তার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে পারতেন! হয়তো এটাই বাস্তবতা।”

কমেডিয়ান হিসেবে শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। জলসাবি, ম্যাজিক ফ্লুট, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসু না প্রতা তিল ছবিতে হাস্যরসাত্মক চরিত্রে তাকে দেখা যায়। আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিটি তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই ছবির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি।

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। ‘প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।

১৯৬৫ সালের দিকে অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রের পর্দায় আসেন। ১৯৭৬ সালে চিত্রনায়ক আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। ১৯৮৭সালে, কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার, তার মধ্যে দায়ী কে? (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে; ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯), চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন।

এছাড়া ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তিনি আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

প্রসঙ্গত, অভিনয়ের গুনে তিনি প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আলোচিত এই অভিনেতা। কিন্তু যাতের সাথে তিনি আজীবন কাটিয়ে গেলেন তারা কেউ তার খবর রাখে এমন অভিযোগ কাম্য নয় দেশের মানুষের।

About Babu

Check Also

গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি, জানা গেল কনের পরিচয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যখন সারা দেশের মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন বেশ নিরব ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *