সাতক্ষিরার কৈখালি ইউনিয়নের কিশোরীদের একটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। রিতিমত আঁতকে ওঠার মতোই খবর!সেখানকার কিশোরীরা পিরিয়ড বন্ধ রাখতে মা, ভাবি বা বান্ধবীর কাছ থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি নিয়ে খাচ্ছে কিন্তু কেন? তবে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের পরিবারের মানুষদেরও তেমন বাধা নিষেধ নেই।
কৈখালীর সাধারণ মানুষের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই যেখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে নারীদের পক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ করে প্রতি মাসে প্যাড কেনার চিন্তা করা কঠিন। পিরিয়ডের সময় তাই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই গোসল করার পুকুরে ধোয়া যায় না সেই কাপড়। ব্যবহৃত সেই অপরিষ্কার কাপড় তাই পাশের নোংরা ও লবণাক্ত ডোবায় ধুয়ে আবার ব্যবহার করেন তাঁরা। তাই জরায়ুর নানান সমস্যায় ভোগেন তাঁরা। মাসিক বন্ধ রাখতে তাঁদের অনেকেই তুলে নিয়েছিলেন হাতের কাছে থাকা ‘সুখী’ বড়ি (সরকারিভাবে বিতরণ করা জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি গ্রহণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনিয়মিত মাসিক, মস্তিষ্ক ও শারীরিক ক্ষতি থেকে শুরু করে চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ্যাও হয়ে যেতে পারেন ব্যবহারকারী।
চলতি বছরের এপ্রিলে এমন একটি প্রতিবেদন বিজ্ঞাপনী সংস্থা সান কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চোখে পড়ে। কৈখালীর কিশোরীদের এই ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে তারা স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ‘সেনোরা’কে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে ‘মেয়ে, তোমার স্বস্তির জন্য’ শিরোনামে একটি ক্যাম্পেইন। প্রাথমিকভাবে কৈখালী এলাকার ৬টি স্থানে ১২টি পানির ট্যাংক বসায় তারা। ছাঁকন প্রক্রিয়া শেষে সেখানে জমা হয় বৃষ্টির পানি। পিরিয়ডের সময় সেই পানি ব্যবহার করে মেয়েরা। জুলাই মাসে শুরু হওয়া ওই ক্যাম্পেইনের আওতায় স্থানীয় প্রায় ৩০০ নারীকে তালিকাভুক্ত করে সেনোরা। প্রাথমিকভাবে তিন মাস তাঁদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্রি দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক ও হেড অব অপারেশনস মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগের এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতেও আমরা এই মেয়েদের পাশে থাকব।’
যেকোনো প্রয়োজনে কল করার জন্য টোল ফ্রি একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। উঠান বৈঠকে এলাকার নারীদের এ বিষয়ে সচেতন করা, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে শুরু করে প্যাড বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য দুজন নারী প্রতিনিধিও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাঁদের ডাকা হয় ‘নোরা আপা’। এমনই একজন ‘নোরা আপা’ হলেন ফারজানা পারভীন। স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক করছেন তিনি। তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারজানা পারভীন বলেন, ‘ট্যাংকের পানি খুবই উপকারে লাগছে। এই দুই মাসে অনেকেরই পিল খাওয়া বন্ধ হয়েছে। কাপড়ও ব্যবহার করেন না।’ আরেক ‘নোরা আপা’ গৃহবধূ খাদিজা সুলতানা বলেন, ‘জুলাই মাসের প্যাড তো ওরাই দিয়ে গেছিল। আগস্ট মাসে আমার কাছে পাঠায়ে দিছে। আমি ১২০টা প্যাড দিছি। অনেক ভালো হইছে। কিন্তু তিন মাস পর কী হবে বুঝতে পারছি না।’
তিন মাস পর কী হবে, এই প্রশ্ন আমরা স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড রিসার্চ এডওয়ার্ড প্রকাশ বালাকে করি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই উদ্যোগকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কীভাবে পুরো ব্যাপারটি টেকসই করা যায়, সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে। চাইলে অন্যরাও আমাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, কিশোরীদের শারীরিক নানা বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের শহুরে সমাজে যেমন দেখা যায় খোজ খবর এবং তদারকি করে তাদের পরিবার সেই তুলনায় গ্রাম অঙ্চলে এই প্রবনাতা অনেকটাই কম এবং দেখা যায় এই কারনে সেখানে কিশোরীদের স্বাস্থঝুকি বেশী থাকে