সুগন্ধা নদীতে অভিযান ১০ লঞ্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গতকাল। হারিয়ে গেছে অনেক গুলো প্রাণ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে লঞ্চটি। মরদেহ ভরা বিদ্ধস্ত লঞ্চটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না কতটা বীভৎস সে দৃশ্য, কতটা হৃদয়বিদারক। স্বজনহারা চিৎকারে যেন ভারী হয়ে উঠেছে সেই লঞ্চে থাকা ভুক্তভোগীদের এলাকাগুলো। কেউবা হয়েছেন স্বজন হারা কেউবা মা বাবা হারা এতিম। তেমনি এক আর্তনাদ বাবা-মা কেউ নাই এখন সে কই যাবে।
আব্দুল হাকিম শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে পাখি বেগম ছোট ছেলে ফাইজুল করিমকে নিয়ে স্বামীর কাছে ঢাকায় আসেন। বাড়িতে ছিল দুই মেয়ে এবং বড় ছেলে ফজলুল করিম। বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে তাদের নিয়ে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন আব্দুল হাকিম।
রাত ৭টার দিকে আব্দুল হাকিম বড় মেয়ে হাফিজাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার জন্য একটা মুরগি রান্না কইরো, বাড়ি পৌঁছে আবার শুক্রবারই ঢাকায় ফিরে যাব।’ এরপর গতকাল সকাল থেকে আর তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাফিজা।
আব্দুল হাকিমের স্বজনরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সকালে ঝালকাঠি এবং বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনজনের কারও সন্ধান পাননি। গতকাল সন্ধ্যায় এ খবর লেখা পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি।
আব্দুল হাকিমের আরেক মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা বাড়িতে আইয়া (এসে) মুরার (মোরগ) গোশত আর খাইবে না। আমার মা নাই, বাবা নাই, কই যামু মোরা। আল্লাহ্ মোগোও নিয়া যাও।’ এমন কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সুমাইয়া।
গতকাল বিকেলে আব্দুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই শতাধিক প্রতিবেশী বসে আছেন। শোকে সবাই নির্বাক। স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে গেছে গোটা এলাকা। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাননি কেউ।
আসলে এতটা হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখে দেখে সহ্য করা যায় না। এলাকাবাসীরা বা স্বজনরা শান্তনা দেওয়ার মতো কোনো কথা তাদের অজানা। তারা নিজেরাই ভারাক্রান্ত। ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকার মতো একটি দুর্ঘটনা এটা। না জানি আরো কত পরিবারের এমন দুর্দশা সম্মুখীন হতে হচ্ছে।