‘মা তুই টাকার জন্য চিন্তা করিস না আমি বেতন পেলেই টাকা পাঠিয়ে দেব।” কিস্তি নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। বেতন পেলেই কিস্তির টাকা পাঠিয়ে দেব। দুই মাসের মধ্যে বেতন পেলে সব টাকা একসঙ্গে পাঠিয়ে দেব।’ ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সুলতানের মা কাঁদতে কাঁদতে ছেলের কথা গুলো সাবাইকে বলছিলো।
সুলতান আলী ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের কাশিবাড়ি গ্রামের মিঠুর ছেলে। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ছয় মাস আগে ওমানে পা রাখেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল উপার্জন করা এবং তার পরিবারকে সাহায্য করা। দুই মাস আগে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।
আট দিন ওমানের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে থাকার পর গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মারা যান সুলতান।
ওমানি প্রবাসী সুলতানের বন্ধু সানি মুঠোফোনে জানান, গত রোববার ওমানের ইবরি এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি প্রাইভেটকার সুলতান আলীকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুলতান।
সুলতান আলীর বাবা মিঠু জানান, ছয় মাস আগে সরকারি ভিসায় একটি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে ওমানে পাঠান তিনি। কাজ না শেখার কারণে প্রথমে চাকরি পাননি। দুই মাস আগে চাকরিতে যোগ দেন। গত রোববার প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে করতে কোমল পানীয় কিনতে ইবরি এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন সুলতান। এ সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে ধাক্কা দিলে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তারপর থেকে আইসিইউতে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এখন ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছি। ছেলের লাশ কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আমি চিন্তিত। ছেলের লাশ আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই।
নিহত সুলতানের চাচা তোরাব আলী বলেন, “আমার ভাতিজা এসএসি পাস করে বিদেশ যাওয়ার জন্য ব্র্যাকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল। বিদেশে পাঠানোর পরও সেখানে যাওয়ার পর ৫ মাস কোনো চাকরি পায়নি। ২ মাস হয়ে গেছে। চাকরি পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ মাসের বেতন পাইনি।শুনেছি ওমানে গাড়ির ধাক্কায় ডান পা ভেঙ্গে যায় এবং মাথায় আঘাত পায়।এরপর বাঁচানো যায়নি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার বলেন, ওমানি যুবক সুলতানের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।