বাংলাদেশে অবস্থানরত দুই জাপানি সন্তানের মধ্যে ছোট নাকানো লায়লা লিনা তার বাবার কাছেই থাকতে চান। বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
লায়লা আরও বলেন, মা একবার আমাদের জাপানে নিয়ে গেলে বাবাকে আর আমরা দেখতে পারবো না। তাই বাবার কাছে থাকতে চাই।
এর আগে ১৬ জুলাই দুই সন্তানের বাবা ইমরান শরীফের আপিল খারিজ করে আদালত রায় দেন, দুই সন্তান জেসমিন মালেকা ও লায়লা লিনাকে মায়ের হেফাজতে থাকবে। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভূইয়া এ রায় দেন।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান গত ২৯ জানুয়ারি এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, মায়ের হেফাজতে থাকবে জেসমিন মালেকা ও লায়লা লিনা দুই সন্তান। একই সঙ্গে তাদের মা নাকানো এরিকোও মেয়েদের নিয়ে জাপানে যেতে পারবেন। এছাড়া দুই সন্তানের জনক ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে দেন আদালত। নাবালক দুই শিশুর কল্যাণের কথা মাথায় রেখে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুই সন্তানের জনক ইমরান শরীফের পক্ষে এই আপিল (পারিবারিক আপিল নং ২২/২০২৩) দায়ের করা হয়।
২০০৮ সালে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফ জাপানী ডাক্তার এরিকো নাকানোকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য কলহের কারণে এরিকো ২০২০ সালের প্রথম দিকে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছিলেন। এরপর ইমরান তার দুই বড় স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এবং ছোট্ট মেয়েটি তার মা এরিকোর সাথে জাপানে থেকে যায়।
তবে এই জাপানি নারী ২০২১ সালে ম/হামারীর সময় ওই দুই মেয়েকে হেফাজতে নিতে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে বিচারক তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন। তবে দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস শুনানি শেষে দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন হাইকোর্ট। এছাড়া মা যাতে শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। পরে আদালত সন্তানদের বাবার হেফাজত থেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এরপর মেয়ে দুটির হেফাজতের বিষয়ে পারিবারিক আদালত সিদ্ধান্ত নেবে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত শিশু দুটি মায়ের কাছে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেওয়া হয়। এরপর মামলাটি আপিল বিভাগ থেকে পারিবারিক আদালতে যায়।
এসব ঘটনার মধ্যে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে এরিকো নাকানো তার দুই সন্তানকে জাপানে নিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শিশুদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার পর বিমানবন্দর থেকে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিবের আদালতে দুই সন্তানের জনক ইমরান শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।