Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মা, আব্বু বেঁচে থাকলে কি করতো এখন : ছেলের প্রশ্নে চোখ ভিজে যায় মা ঝর্ণার

মা, আব্বু বেঁচে থাকলে কি করতো এখন : ছেলের প্রশ্নে চোখ ভিজে যায় মা ঝর্ণার

দেশজুড়ে চলমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দু-মুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচাটাই সাধারণ মানুষের জন্য এখন নিতান্তই একটি চ্যালেঞ্জ-স্বরুপ। আর সেখানে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে রীতিমতো পথে বসার উপক্রম এক মায়ের।

এদিকে জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার বাবার হাত ধরে নামাজে যেত আনাস। গেল শুক্রবারেও গিয়েছিল সে। তবে বাবা নয়, গিয়েছিল মামার হাত ধরে। বাবার হাতের স্পর্শটা যে ভুলতে বসেছে সে। বাসায় ফিরে প্রশ্ন করে- মা, আব্বু বেঁচে থাকলে কি করতো এখন? আনাসের প্রশ্নে চোখ ভিজে মা ঝর্ণা ইয়াসমিনের। কি জবাব দেবেন ছেলেকে? তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন তিনি। বোন ও ভাগ্নের কান্না দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেন না মামা রবিউল ইসলাম।

বাবার কথা স্পষ্ট মনে আছে রাজধানীর মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া আনাসের।

কিন্তু বাবা কি তা বোঝার আগেই বাবাহারা হয় আব্রাহাম। ছোট্ট আব্রাহামের বয়স এখন মাত্র ১৪ মাস। আরও ৬ মাস আগে বাবাকে হারিয়েছে আনাস ও আব্রাহাম। আর এই দুই ছেলেকে নিয়ে দিশাহারা মা ঝর্ণা।

আনাস ও আব্রাহামের বাবা আবুল বাশার। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চাকরি করতেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এনএটিপি-২ (ডিএই) প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে। আক্রান্ত হন চলতি বছরের মার্চে। ১৭ দিন লড়াই করেন হাসপাতালে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চলে যান দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে অবুঝ দুই ছেলে ও স্ত্রীকে রেখে। তার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। যা এসেছে পরিবার ও আবুল বাশারের অফিসের সহায়তায়।
বাশারের মৃত্যুর পর এক দুঃসহ কঠিন জীবনে পা দিয়েছেন ঝর্ণা। বোন এবং বাবাহারা দুই ভাগ্নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন মামা রবিউল ইসলাম। তিনি অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী, পড়াশোনা খুলনায়। বোনের এই দুর্দশার কথা ভেবে নিজের পড়াশোনা বাদ রেখে চলে আসেন ঢাকায়। ফুডপান্ডায় খাবার ডেলিভারির কাজ নিয়েছেন উপায় না পেয়ে। বোনের সংসারে যে অভাব লেগেই আছে। আজ চাল নেই তো কাল নেই তেল। খেয়ে না খেয়ে দুধের শিশুকে নিয়ে অসহায়। খাবার ডেলিভারি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকম বোনের সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন।

তবে বাড়িওয়ালাও বেশ সহযোগিতা করেছেন ঝর্ণাকে, দুই অবুঝ শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে। মওকুফ করেছেন কয়েক মাসের ভাড়াও। চালিয়ে যাচ্ছেন যথাসাধ্য সহযোগিতা।

কিন্তু শঙ্কা তো কাটে না ঝর্ণার। আনাসের স্কুলের বেতন বাকি ফেব্রুয়ারি থেকে। কোথায় মিলবে টাকা? স্কুলের বেতন ১২৫০ টাকা। একাধিকবার স্কুলে বেতন মওকুফের জন্য গিয়েছেন ঝর্ণা। জানেন না কি জানাবে স্কুল থেকে। জুটছে না খাবার, তার ওপর ছেলের স্কুলের বেতন। তার শঙ্কা- ছেলেকে না আবার স্কুল ছাড়তে হয়!

খেয়ে না খেয়ে ঢাকাতেই পড়ে আছেন ঝর্ণা। যদি তার একটা কাজের ব্যবস্থা হয় এই আশায়। অন্তত ছেলে দুটোকে মানুষ করতে পারতেন। যদিও স্বামী আবুল বাশারের অফিস থেকে ঝর্ণাকে চাকরির আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটাই বা কবে হবে জানেন না ঝর্ণা।

ঝর্ণা বলেন, আনাস প্রায়শই তার বাবার কথা বলে। বাবা থাকলে এটা করতো, ওটা করতো। বাবাকে ভুলতেই পারছে না সে। আর আব্রাহাম তো বাবাকে দেখেছে মাত্র ৮ মাস।

‘ছোট ভাইটার ওপর ভর করে বেঁচে আছি। কিন্তু তার আয়ে খাবারটাও যে জুটছে না সেভাবে। বাকি খরচ তো আছেই-’ চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন ঝর্ণা। তিনি বলেন, আমার চাকরিটা হওয়া খুব জরুরি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এই সময়টা চলবো কি করে? খুব অসহায় লাগে। সামনে দুই ছেলের ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। সুখের সংসার ছিল। করোনায় স্বামীর মৃত্যুতে সব যে অন্ধকার হয়ে গেল। নিজেকে নিয়ে কি আর ভাববো? চিন্তা শুধু- দুই ছেলেকে নিয়ে।

এদিকে এই মুহুর্তে ঝর্ণার পরিবারটির অবস্থা এমনই যে, কারো সাহায্য ছাড়া অনেকটা না খেয়েই দিন পার করতে হয় তাদের। তবে এর আগে অনেকেই তাকে সাহায্য করতে চাইলেও, চক্ষু লজ্জায় তিনি এতে অসম্মতি জানান। কিন্তু বর্তমানে তিনি এমন একটি পর্যায় এসে দাড়িয়েছেন যে, কারো সহযোগীতা ছাড়া একেবারেই চলতে পারছেন না তিনি। হয়তো ছোট-খাটো একটি চাকরি পেলেও অন্তত দু-মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে যেত তার পরিবারটি।

About

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *