সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপ শোনা যায়, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহিকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। সেই ফোন কলে এক পর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, চিত্রনায়িকা মাহি যদি স্বেচ্ছায় সেখানে না যান তাহলে তাকে সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে তুলে নিয়ে আসার কথা।
সেই ফোন কলে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম মেট্রোপলিটন ডিটেকটিভ (ডিবি) পুলিশ। আর এই সংস্থার নাম উল্লেখ করায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হবে। আজ (মঙ্গলবার) অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে ডিবি কার্যালয়ের বাইরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ এমন ধরনের মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি অন্য কোনো আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা বলবো না। যেহেতু তিনি (ডা. মুরাদ হাসান) ডিবি উল্লেখ করেছেন। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। ‘
অডিও কলের রেকর্ডটি কীভাবে ফে’সবুকে ছড়িয়েছে জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ যদি অভিযোগ দায়ের করে এবং আমাদের ডিবি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ আসে তাহলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কোনোকিছু ভাইরাল হলে আমাদের ডিবির সাইবার ইউনিট দেখভাল করে ও তদন্ত করে।’
একজন সাংবাদিক হারুনকে প্রশ্ন করেন, সেদিন মাহি ও মুরাদের ফোনালাপের পরে কোনো খারাপ কাজ সংগঠিত হয়েছিল কি না? এই প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আমরা প্রয়োজনে সবার সঙ্গেই কথা বলব।’
বেশ কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনায়-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধ’র্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাঁ’স নিয়ে ভেতর-বাইরে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।
এসবের জেরে সোমবার রাতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আজ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান।
এদিকে মুরাদ হাসানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সংশ্লিষ্টদের মতে, দল থেকে বহিষ্কার হলে তাকে সংসদ সদস্যপদও হারাতে হতে পারে। মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘা’ত/ক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সরকার গঠন করার পর ডাঃ মোঃ মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে না হতেই ঐ একই বছরের ১৯ মে, তার দফতর পরিবর্তন করার পর তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তার পিতা মরহুম মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।