Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মাহফিলে গিয়ে হেনস্তার ঘটনার বিষয়ে মুখ খুললেন আবু ত্বহা মুহাম্মদ

মাহফিলে গিয়ে হেনস্তার ঘটনার বিষয়ে মুখ খুললেন আবু ত্বহা মুহাম্মদ

সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতে গিয়ে বর্তমান সময়ের আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান এবং তার কয়েকজন সহকর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। যেটা নিয়ে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এবার এ বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। গত রবিবার অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটি”উব একটি ভিডিওতে তাকে ঘটনার বিস্তারিত কথা বলতে শোনা যায়। ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হতে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

ওয়াজ মাহফিলের ভিডিওর প্রশ্নোত্তর পর্বে এক ব্যক্তি লিখিত প্রশ্ন করেন- আমি আপনার মুখ থেকে সত্য ও ঘটনা জানতে চাই, গত ১৭ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ ওয়াজ মাহফিলে আপনার সাথে কি করা হয়েছিল?

জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা বলেন, ওয়াজ মাহফিল করতে এসে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। অনেক মাহফিলে গিয়েছি যেখানে উচ্চ সম্মান, ভালো আচার-ব্যবহার, রুটিন সিস্টেম, আমাদের যাতায়াত থেকে শুরু করে নিরাপত্তা এত সুন্দর করেছে যা বলার মতো নয়। এরকম অনেক মাহফিল করেছি। গত বছর দেড়শ থেকে ২০০ মাহফিল করেছি। এই বছর অলরেডি মোটামুটি ৬০ থেকে ৭০টি করা হয়েছে। আমি নভেম্বরে বাড়ি ছেড়েছি, মাহফিলের সিজন শেষ হবে মার্চে। ভিতরে কত গল্প থাকে জানেন না।

তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের খালি হাতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমন বহু মাহফিল হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, মাহফিল শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিন্তু কমিটির কোনো খবর নেই। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমন একটা অনুষ্ঠান হয়েছে, মনের মত ওয়াজ করতে না পারায় রাত ২টায় সময় মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এমনও হয়েছে যে মাহফিলের পোস্টারে আমার নাম আছে, আমি নিজেও জানি না। কিন্তু দেড় থেকে দুই মাস আগে আমার নামে টাকা আদায় করা হয়েছে। এমনও হয়েছে কেউ আমার নামে মাহফিল নিল, কমিটি থেকে অগ্রিম কিছু টাকাও নিয়েছে, প্রচার করেছে আমিই টাকা নিয়ে নিয়েছি। কত কি যে হয়েছে এ জীবনে সেসব বলে বোঝাতে পারব না।

আলোচিত ইসলামী বক্তা বলেন, আমরা এখন সরাসরি অফিশিয়ালি মাহফিল নিই। আজ যারা মাহফিল নিয়েছেন, তারা কিন্তু সরাসরি আমার অফিসে গিয়েছিলেন, দেখা করার পর আমাদের একটা ফর্ম আছে; সেটা পূরণ করেছে. আমাদের কিছু শর্ত আছে, আমাদের শর্তগুলো মেনে নিয়ে তারপর অনুষ্ঠান করেছি। আমাদের তিনটা নম্বর আছে, এগুলো ছাড়া আমরা কোনো মাহফিল করি না। যদি ফর্মটি পূরণ করা হয়, আমরা যাচাই করি এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা আপনাদের মাহফিল নিয়েছি, মাহফিলের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পুলিশের অনুমতি, আমাদের যাতায়াতের বিষয়গুলো দেখেন, এরপর আমরা এগুলো নিশ্চিত করি। এত সহজে মাহফিল নিই না।

আবু ত্বহা বলেন, গোবিন্দগঞ্জে আমাদের নামে মাহফিল হয়েছে, তা আমরা জানতাম না। ১৭ ডিসেম্বর রাতে বগুড়ায় আমার মাহফিল হয়। তারপর শুনলাম গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় আপনার নামে কিছু ধর্মপ্রাণ ভাইয়ের মাধ্যমে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আপনার নামে অনেক টাকা তোলা হয়েছে। আমি বললাম কে মাহফিল নিয়েছে, কার মাধ্যমে? তারপর আমাদের একজন পরিচিত ভাইকে দেখালেন। ওই ভাইয়ের মাধ্যমে মাহফিল নেওয়া হয়েছে। তবে ওই ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের মাহফিলের কথা হয়নি। আল্লাহ সাক্ষী।

তিনি বলেন, অন্য ভাইয়ের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ওই কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে মাহফিলের তারিখ ঠিক করেন। আমি জানি না তারা মাহফিলের দুই দিন আগে এসে কাঁদতে থাকে। ভাই, মাহফিল সাজানো হয়েছে, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি মাহফিলের জন্য ৩০ মিনিট সময় দেন। মাহফিলের আয়োজন করেছি, টাকা জোগাড় হয়েছে, না এলে ১০ মিনিটের জন্য আসেন। এসে মুখ দেখিয়ে চলে যান। অন্যথায় জনগণ আমাদের পিটিয়ে মারবে। তখন আমরা বললাম বগুড়ায় আমাদের মাহফিল আছে, সেখানে যাওয়ার সময় সেখানে কিছু সময় দেব। এই প্রক্রিয়ায় আমরা কখনো মাহফিল করি না। পরে সেখানে গিয়েছিলাম।

আলোচিত ইসলামী বক্তা বলেন, শুনেছি তারা প্রচার করেছে যে আমরা বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মাহফিল করব। তারপর আমাদের কানে খবর আসছে মাগরিবের পর আপনাদের আলোচনা করতে হবে। আমরা সেখানে পৌঁছলাম বিকাল ৪টায়। একটু রেস্ট নেব, রেস্ট নিয়ে নামাজ-কালাম সারবো। এরপর মাগরিবের পর মঞ্চে যাব। আমি গিয়ে শুনলাম মাইকে ঘোষণা বিকাল ৩টা থেকে আমার নামে মাহফিলের ঘোষণা। মানুষ বসে আছে। মানুষ নির্দোষ। তাদের কোন দোষ নেই। তারা সত্য জানে না। তবু তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লাম মঞ্চে। তবু তাড়াহুড়ো করে স্টেজে উঠালো। আমি সেখানে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট বক্তব্য দিয়েছি।

তিনি বলেন, আলোচনার পর বলেছি আপনারা বসেন। মাগরিবের নামাজের পর ওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আমরা মাগরিবের নামাজ আদায় করব। নামাজ শেষে আলোচনা সভা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এটি আমার ইউটিউব সদস্যদের সেখানে ক্যামেরা সেট আপ করতে দেয়নি। পুরো ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কেন তারা সেদিন ক্যামেরা লাগাতে দেয়নি? সেখানে ক্যামেরা থাকলে মানুষ দেখতে পেত কি হয়েছে?

আবু ত্বহা আরো বলেন, একটি ছেলে ক্যাডার ফোর্স আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। তার বক্তব্য হলো, টাকা দিয়ে এনেছি, ভাড়া দিয়ে এনেছি, যতক্ষণ বলব ততক্ষণ আলোচনা করতে হবে। দুই ঘণ্টা আলোচনা করতে হবে। এই কথা শুনে একজন আলেম কি বসতে পারেন? তখন আমি বললাম, কত টাকা দিয়েছিলেন? তখন তিনি বলেন আপনার ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার দিয়েছি। কিন্তু আমি সেই ব্যক্তিকে চিনি না। তখন আমি বললাম তাকে নিয়ে আসুন, যত টাকা নিয়েছেন ফেরত দেন।

তিনি বললেন, আমার অপমান হওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। হাদিয়ার টাকাসহ নিয়ে যান, আমার মাহফিল করার দরকার নেই। জনগণ দেখলও যে একটা হট্টগোল শুরু হয়েছে। মাহফিলের সব দর্শক আমাদের পাশে ছিলেন। মাহফিলের দর্শকরা গাড়িতে আমাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। আর আমাদের সঙ্গে যে ছিলেন, মুজাহিদ ও আরও দুই ভাইকে তারা বেদম পিটিয়েছেন।

মাহফিলের ৫০ হাজার টাকা সম্পর্কে আবু ত্বহা বলেন, ৫০ হাজার টাকা মুখের কথা নাকি? উল্টো আমাদের ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন। তারা আমার ঘড়িটিও ছিনিয়ে নিয়েছেন। ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলেছেন। পি”টিয়ে অপমান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আলেমরা কষ্টে আছেন, নারী অথবা অর্থ কেলে”ঙ্কারি দিয়ে তাদেরকে অপমান করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, ত্বহা ও তার তিন সহকারী মাওলানা শায়খ আব্দুল আলিম, মাওলানা মোজাহিদ ও মাওলানা ফিরোজকে কিছু লোক ঘিরে রেখেছে। ভিডিওটিতে আরো দেখা যায়, ত্বহা এবং তার কয়েকজন সহকর্মী ওয়াজ মাহফিলের স্থান ত্যাগ করে তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উঠে পড়লে, সেটা অবরুদ্ধ করে রাখে সেখানকার কিছু লোকজন। এরপর ঘটনাস্থলে মাওলানা মুজাহিদকে রাস্তার মাঝের দিকে টেনে নিয়ে মা”রপিট করতে দেখা যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ভাই”রাল হয়ে যায়।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *