রাস্তার ধারে দোকানে সারিবদ্ধভাবে মাস্ক পড়ে আছে। দোকানের সামনে ঝুলছে শতাধিক মাস্ক । মধ্য গর্ত দিয়ে প্রবেশ এবং প্রস্থান করুন। কাউন্টারটি ফাঁসের পিছনে রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দোকানটি দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। আজিজুর রহমান। খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল আসল রহস্য!
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গাড়ি চালানোর সময় গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার পুরাতন ব্যাংক মোড়ে সন্দেহজনক মাস্কের দোকান দেখতে পান ইউএনও। গাড়ি থামিয়ে দোকানের দিকে এগিয়ে যান। সঙ্গে দুজন আনসার সদস্য। ইউএনওকে দেখে দোকানি বেরিয়ে আসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক ছাড়া আর কিছু বিক্রি করেন না।
তবে দোকানদারের কথায় সন্দেহ হয় ইউএনওর। একজন আনসার সদস্যকে দোকানে তল্লাশি করতে বলা হয়। আনসার সদস্য দোকানে ঢোকার সাথে সাথে দোকানদার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর ইউএনও থানায় খবর দেন। পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাব্বির রহমান ও পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় সাহার যৌথ নেতৃত্বে থানা থেকে পুলিশ বাহিনী আসে। পুলিশ দোকানে হানা দেয়। দোকান থেকে মাদক, দেশীয় অস্ত্র, জুয়ার সরঞ্জাম ইত্যাদি একে একে বেরিয়ে আসে।
উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে এমন ব্যবসা দেখে বিস্মিত ইউএনওসহ উপস্থিত সবাই। রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অভিযান চলে।
কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে মাস্ক দোকান। এই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে তার বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে ওই দোকান থেকে পুকেমন নামের এক ধরনের কার্ড ২০ টাকায় কিনেছে। অনেকটা তাস খেলার মতো। আমি আমার ছেলের কাছে জানতে চাই—এটা কী, কীভাবে খেলে ?সে আমাকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে এটি খেলতে হয়। খেলার নিয়ম তাস খেলার মতই।ওই দিন থেকে আমি আমার ছেলেকে চোখে চোখে রাখি এবং এর কুফল সম্পর্কে বলি। তখন সে ওই কার্ডগুলো ছিঁড়ে ফেলে এবং আর কোনো দিন কিনবে না বলেও অঙ্গীকার করে।’
এই অভিভাবক আরও বলেন, দোকানটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে জানিয়েছি।
কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আমরা এক অভিভাবকের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “বিদ্যালয়টি কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কারণ অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় ওই দোকানদার মুখোশের আড়ালে অবৈধ পণ্য বিক্রি করে।
পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় সাহা বলেন, আমরা দোকান থেকে মালামাল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাব এবং জব্দ তালিকা নথিভুক্ত করে দোকানদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাব্বির রহমান বলেন, মুখোশের দোকানে অভিযানের সময় আমরা যে জিনিসগুলো জব্দ করেছি তা যুবদলকে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এখানে মুখোশের আড়ালে যৌন উত্তেজক ওষুধ, মাদক সামগ্রী, অস্ত্রসহ নানা জিনিস বিক্রি করা হয়। আমরা তাদের থানায় নিয়ে যাব এবং জব্দ তালিকা তৈরি করব। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা পুলিশের মাধ্যমে ওই দোকানদারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হবে। উদ্ধারকৃত মালামাল ধ্বংস করা হবে। কোনো কারণে তাকে পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় নিয়মিত মামলা রুজু করে জব্দকৃত মালামাল আদালতে পাঠানো হবে।