যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নাইমুল হাসানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলার বাদী মো. বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অভিযোগপত্রে এক নম্বর আসামি হলেন ইশতিয়াক মাহমুদ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর হাকিম জাকি আল ফারাবী চার্জশিট গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেফতারের বিষয়ে তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩১ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছে আদালত। এদিকে মুজাহিদ আজমির তানহা মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা অংশ নেন। কিন্তু ওই রাতে ডিনারের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এসময় বার্নিকাটের গাড়িবহরেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও আসামিরা বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে ইট ছুড়তে থাকে এতে তার বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে ডাঃ বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাজন সাহা বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার বাদী সুজনের সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদিকে মামলার ১ নম্বর আসামি হলেন তার শ্যালক মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ। ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন বদিউল আলম এবং নিচতলায় থাকেন ইশতিয়াক মাহমুদ। দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। ঘটনার দিন রাতে বাদীর বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করেন বদিউল আলম। নৈশভোজে বার্নিকাট ছাড়াও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, হাফিজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা অংশ নেন।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নৈশভোজকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন বাদীর বাসায় বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন, হাজিফ উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা অংশ নেন। কিন্তু সেখানে নৈশভোজের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আসামি মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ (৬২), ফিরোজ মাহমুদ (৪৮), নাইমুল হাসান রাসেল (২৭), মীর আমজাদ হোসেন আকাশ (২৮), মো. সাজু ইসলাম সাজু (৩২), রাজিবুল ইসলাম রাজু (২৯), মুহাম্মদ শহীদুল আলম খান কাজল (৪০), সিয়াম (২৫), অলি আহম্মেদ জনি (২৩), মোহাম্মদ মুজাহিদ আজমীসহ (তান্না) অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জন বাদীর বাড়িতে হামলা করেন।
ঘটনার একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে তারা বার্নিকাটের গাড়িবহরে ধাওয়া করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে আসামিরা বাদীর বাড়িতে ইট নিক্ষেপ করে এবং জানালার কাঁচ ভাঙে, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহাবুব মজুমদারকে হ/ত্যার হুমকি দেয়। পরে বাদীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
সম্পূরক চার্জশিটে আসামিরা হলেন- মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ, নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম, শহিদুল আলম খান, সিয়াম ও অলি আহমেদ। ইশতিয়াক মাহমুদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন। এছাড়া মুজাহিদ আজমির তানহা একাই মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।