Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ভর করে আন্দোলনের নতুন ছক কষছে বিএনপি

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ভর করে আন্দোলনের নতুন ছক কষছে বিএনপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপি এই ভিসা নীতি ব্যবহার করতে চায়। ভিসা নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় বিএনপির জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এ প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন জোরদার করতে দলের মধ্যে চলছে আলোচনা।

দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ করে আরও জোরালোভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ সফরে ভিসা নীতিমালা প্রয়োগের ভিসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। . তবে ভিসা নীতিমালার আবেদনে বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করায় তারা বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। নেতারা বলছেন, বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়।

গত ২৯শে জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্খিত সাফল্য না পাওয়ায় হতাশ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কয়েকদিন আগে পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিলেন দলটি। ভিসা নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় এখন প্রেক্ষাপট পাল্টাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

দলের অন্তত তিন শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের ফটোশুট ও সেলফি ভাইরাল হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে। গত কয়েকদিন ধরে সরকারি দলের নেতারা যেভাবে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন, গতকাল থেকে তা দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের কারণে সরকারি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে এক ধরনের টানাপড়েন শুরু হবে।

এমন প্রেক্ষাপটই চূড়ান্ত আন্দোলনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করে বিএনপি। এখন কিভাবে আন্দোলনে সফলতা পাওয়া যায় তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানান, ভিসা নীতি বাস্তবায়নের পর সরকারের মনোভাব কেমন হবে সেটাই দেখার বিষয়।

চলমান আন্দোলন চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল থাকবে। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বোঝার একটা ব্যাপারও আছে। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এবং এ বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় গণসমাবেশকে ঘিরে অক্টোবরের মাঝামাঝি যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, বিএনপির লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিমালার পরিপ্রেক্ষিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা।

সরকার অক্টোবরের শেষের দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দলের কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রাখা এক নেতা।

দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি ঢাকায় সাধারণ সভা, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা অবরোধ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার প্রস্তাব দিয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। .

সম্প্রতি ভৈরব থেকে সিলেট রোডমার্চ শুরুর আগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ভিসা নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় অন্যান্য দেশে একই ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ন্যায্য। আমি মনে করি এই পদক্ষেপ বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ‘

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিসা নীতি বাস্তবায়নের পর সরকার কী করবে তা তাদের ব্যাপার। আমরা আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন জোরদার করে সরকারের পদত্যাগে বাধ্য করব। ‘

যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই যাঁদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করছে তাঁদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। তবে বিএনপি নেতারা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলতে চান না। তাদের বিশ্লেষণে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভয়টি বিশেষভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায় কারা তা দেশি-বিদেশি সবাই জানে।

তাদের মতে, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সহিংস আন্দোলনে যায়নি। বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতা হয়েছে। তারা আরও বলেন, বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়। জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ আরও অনেক রাজনৈতিক বিরোধী দল রয়েছে।

কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগে থাকা বিএনপির এক তরুণ নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা হিসেবে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র তা সত্য বলে বিশ্বাস করে। ভিসা নীতির আবেদন তাই বলে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে, তখন তা দিন দিন কঠোর হয়। তাই ভিসা নীতি প্রয়োগ করাই শেষ কথা নয়। আরও বড় পদক্ষেপ অনুসরণ করা যেতে পারে। তাহলে দেশে আরও বড় সংকট দেখা দেবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, সরকারের যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার মনোভাব দেশের মানুষ ভুগতে শুরু করেছে।

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *