Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / National / মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা, চারদিক থেকে চাপে আছি, ফোনের পর ফোন আসছে : বিজিএমইএর সভাপতি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা, চারদিক থেকে চাপে আছি, ফোনের পর ফোন আসছে : বিজিএমইএর সভাপতি

মানবাধিকার ইস্যু ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে এখন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্ক সুবিধা পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এসব গুজব দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা চিন্তিত।

বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ভাবনা জানতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে আজকের পত্রিকা। তারা সবাই বলেন, যা শোনা যাচ্ছে তা কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের জন্য সুখকর নয়। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত হলে দেশের পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মার্কিন ভিসা নীতি এখন পর্যন্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব ফেলেনি। তবে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতির কারণে আমি খুব চাপে আছি। সবদিক থেকে চাপে আছি। মালিকদের চাপ, ক্রেতাদের চাপ। ফোনের পর ফোন আসছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় বাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশগুলো ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য দেশগুলো সুদের হার বাড়িয়েছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। ফলস্বরূপ, লোকেরা তাদের খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্র যেমন পোশাকের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পোশাক রপ্তানিতে। মার্কিন তৈরি পোশাক রপ্তানি টো শতাংশের বেশি কমেছে। ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।

ইউরোপের বাজারে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পোশাক রপ্তানিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, শুল্ক দিয়ে যদি ইউরোপে কাপড় রপ্তানি করতে হয়, তাহলে আমাদের রফতানি ধস নামবে। আমাদের পোশাক রপ্তানি আর টিকবে না। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা কোনোভাবেই ইউরোপের বাজারে শুল্ক গ্রহণ এবং কাপড় রপ্তানি করতে সক্ষম হব না।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে অর্ডার দিতে ক্রেতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। তারা বলেন, ক্রেতাদের শঙ্কা জামাকাপড়ের ক্রয় অর্ডার দিলেও নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা হলে তা সঠিকভাবে চালান করা কঠিন হবে। তাছাড়া ক্রেতাদের মধ্যে আরেকটি বিষয় কাজ করছে, তা হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ হলে তাদের ব্যবসাও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং পোশাক খাতের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ আজকার পত্রিকাকে বলেন, “দেশ এখন যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা রাজনৈতিক এবং বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক। এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কানাঘুষা চলছে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো খবর নয়।এখন যে সমস্যাটি রয়েছে তা সরকারী পর্যায়ে সমাধান করতে হবে।

ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকের ওপর শুল্কহার আরোপ করা হলে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি আজকার পত্রিকাকে বলেন, এই বাজারে আমরা যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই তা বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের কাছে আমাদের পণ্যের মূল্য সংবেদনশীল করে তোলে। আমরা যদি এখন শুল্ক আরোপ করি, তাহলে আমরা ইউরোপের বাজার হারাবো। যা আমরা পোশাক খাত তৈরি করতে পারি না।

মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমবে না। ফলস্বরূপ, মানুষ শীঘ্রই যে কোনও সময় অতিরিক্ত ব্যয় করতে যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী দিনে পোশাক রপ্তানি আরও হোঁচট খাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ইউরোপ মানবাধিকার ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে শ্রম আইন সংশোধনের জন্য দিন দিন চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে বিজিএমইএ থেকে জানানো হয়েছে, ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার না দিলে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি সমস্যায় পড়বে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক বিষয় সামনে এনে আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।” এ জন্য সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা।

ইউরোপে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার শর্তগুলির মধ্যে একটি হল সম্মতি নিশ্চিত করা। একটি দেশ ৬টির বেশি রপ্তানি করলে জিএসপি সুবিধা পায় না।

ইউরোপের বাজারে এর মোট রপ্তানির ৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০ শতাংশের কম হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এত দিন জিএসপি সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি করে আসছে। এ অবস্থায় ইউরোপে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নানা সমস্যার কারণে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা দূর হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ড. হাতিম

তিনি দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, সুসম্পর্কের কারণে এতদিন রপ্তানি কোটা অতিক্রম করেও আমরা শুল্ক সুবিধা পাচ্ছিলাম।বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইউরোপ জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নিলে আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি হবে।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *