সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রয়াত পৌরসভা কাউন্সিলর একরামের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কথিত সেই বন্দুকযুদ্ধ ঘটার সময় কাউন্সিলর একরামের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনে রেকর্ডকৃত ফোনালাপ এবং সেই সাথে একরামের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহিয়ার বলা কথা ‘আব্বু তুমি কাঁদতেছ যে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে এবং যেটা আবার ভাইরাল হয়েছে।
গত শুক্রবার র্যাবের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের সেই সময়কার মহাপরিচালক ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার মেফতাহ উদ্দিন আহমেদকে “মানবাধিকার ল’ঙ্ঘনের” অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কাউন্সিলর একরামুল হকের ‘বিচারবহির্ভূত হ’/ত্যাকাণ্ডে’ মেফতাহ উদ্দিন জড়িত ছিলেন।
২০১৮ সালের ২৬ মে একরাম প্রয়াত হন। তখন একরামের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ দ্রব্যের কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বা’হিনী।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুলের স্ত্রী আয়েশা একরাম গতকাল শনিবার দেশের একটি জনপ্রিয় গনামধ্যমকে বলেন, ‘গত তিন বছরে আমার স্বামী একরাম হ’/ত্যার বিচার দূরে থাক, মামলাও করতে পারিনি। হ’/ত্যাকাণ্ডের পর থানা ও আদালতে গিয়েও মামলা করা সম্ভব হয়নি। এখনো বিচার চাইতে পারি না।’ তিনি ক্ষু’ব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘বিচারের ক্ষেত্রেও বৈষম্য। এটা মানা যায় না।’
আয়েশা অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল টেকনাফ থানায় থাকলেও তা পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। সেই ঘটনার অনেক কিছু ওই মোবাইল ফোনে রেকর্ড হয়ে গেছে।
আয়েশা একরাম বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে কী কষ্টে দিন যাপন করছি, একমাত্র আমিই জানি। আমার স্বামী নিষিদ্ধ দ্রব্যের কারবারি হলে তো আমাদের কাছে প্রচুর টাকা-পয়সা থাকত। অথচ একরাম এমন কোনো কিছু রেখে যাননি, যা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলে।’
একরামের বড় মেয়ে তাহিয়া এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে নাহিয়ান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আয়েশা বলেন, তাঁর স্বামীর প্রয়ানের পর দেবর এহতেশামুল হক বাহাদুর টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি মাসিক ভাতা পান ১০ হাজার টাকা। তিনি ভাতার সেই টাকা তাঁর দুই ভাতিজি তাহিয়া ও নাহিয়ানের পড়ার খরচ হিসেবে দেন। এ ছাড়া পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একরামের একটি দোকান থেকে ভাড়াবাবদ মাসে ১০ হাজার টাকা পান। এ দিয়ে তাঁদের সংসার চলছে।
কাউন্সিলর একরাম ছাত্রলীগ নেতা থেকে পরে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আয়েশার অভিযোগ, ঘটনার পর তিনি সরকার ও সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু পদে পদে বাধার কারণে কারো সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি।
সেই সময়ে নুরুল বাশার যিনি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেছিলেন, একরামুলকে আমি খুব ভালো করে চিনি কারণ আমরা একই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। “তিনবারের পৌরসভার কাউন্সিলর এবং একজন সৎ ব্যক্তি একরামুল সবসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী। এটা অবিশ্বাস্য যে সে নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসায় জড়িত ছিল।”