ছাত্রকে বিয়ে করা তুমুল আলোচিত সেই কলেজ শিক্ষার নিথরদেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। প্রয়ানের বিষয়ে তদন্ত করছেন পুলিশ। তবে এরই মাঝে এক এক করে বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সম্প্রতি কলেজ শিক্ষিকার প্রয়ানের ব্যাপারে জানা গেল আরো একটি খবর আর সেইটা হলো শিক্ষিকার স্বামী প্রথমে বটি খোঁজেন, না পেয়ে ওড়নায় আগুন দেন।
কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করা শিক্ষক খায়রুন নাহারের নিথরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খায়রুন নাহারের স্বামী মামুনের দাবি, শিক্ষিকার ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ মামুনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাটোর থানায় নিয়ে আসে।
আজ সকালে নাটোরের বালারী পাড়া এলাকায় সাবেক কমিশনার নান্নু শেখের বাড়ির চারতলা থেকে খায়রুন নাহারের নিথরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
খায়রুন নাহার ওই বাড়িতে স্বামী মামুনের সঙ্গে থাকতেন। খারুন নাহারের স্বামী মামুন বলেন, সকাল ২টার দিকে খারুন নাহার খুব অসুস্থ বোধ করলে আমি ওষুধ নিতে হাসপাতালে যাই। ফিরে এসে দেখি দরজা খোলা। তখনই চিন্তায় পড়ে গেলাম। বেডরুমে ঢুকে দেখি খায়রুন নাহা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ছাদ থেকে ঝুলছে। আমি রান্নাঘরে গিয়ে বটিকে ড্রপ করার জন্য খুঁজছিলাম। কিন্তু ধনুক না পেয়ে লাইটার জ্বালিয়ে ঘোমটা জ্বালিয়ে দিলাম। ঘোমটা অর্ধেক পুড়ে গেলে আমি উত্তেজনার সাথে ছিঁড়ে বিছানায় তার নিথরদেহ নামিয়ে দিলাম। এরপর আমি দৌড়ে বেসমেন্টে নাইট গার্ড নিজাম উদ্দিনকে খবর দেই। ফিরে এসে দেখি সে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গভীর রাত হওয়ায় পাশের ফ্ল্যাট থেকে কাউকে ফোন করিনি।
নৈশ প্রহরী নিজাম উদ্দিন বলেন, মামুন রাত ২টার দিকে নেমে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে। তারপর আমি গেট খুলি। ফিরে আসার কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী জানান, তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করছেন। তারপর উপরে গিয়ে দেখি নিথরদেহ বিছানায় পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তখন পুলিশ আসে। ‘
জানা যায়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে গোপনে বিয়ে করেন দুজনে। বিয়ের ছয় মাসেরও বেশি সময় পর বিষয়টি সম্প্রতি এলাকায় জানাজানি হয়। শিক্ষক খায়রুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। মামুন নাটোর এনএস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
জানা যায়, এক বছর আগে একই উপজেলার ধারাবাড়িশা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মোহাম্মদ আলীর ছেলে মামুনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় শিক্ষক খায়রুনের। পরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাউকে কিছু না বলে গোপনে বিয়ে করেন তারা। এর আগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল খায়রুন নাহারের। কিন্তু পারিবারিক কলহের কারণে সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। তার বড় ছেলে বৃন্ত প্রথম স্বামীর বাড়িতে। অন্যদিকে, ছোট ছেলে ভীম গুরুদাসপুর পৌর এলাকার খামার নাচকোয়েডে তার নানীর বাড়িতে রয়েছে।
বিয়ের ছয় মাস পর তাদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে ছেলের পরিবার তা মেনে নিলেও খায়রুন নাহারের পরিবার তা মানেনি। বর্তমানে নাটোর শহরের বল্লারীপাড়া এলাকায় সাবেক কমিশনার নান্নুর ছেলে তানভীর সিদ্দিকী সুজনের বাড়ির চারতলা ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন তারা।
মামুন বলেন, “বিয়ের পর থেকে আমাদের পরিবারে কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু খায়রুন নাহারের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। তিনি আরও বলেন, “খায়রুন নাহার মাত্র দুদিন আগে বেতন সংগ্রহ করেছেন। ঋণের কারণে ২৭ হাজারের মধ্যে ২০ হাজার কেটে নেন। বাকি ৭ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা দেন বড় ছেলেকে। কিন্তু ছেলের দাবি, এখন তার প্রয়োজন ৬ লাখ টাকা। সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। ফলে বড় ছেলের প্রতি তার মোহভঙ্গ হয়ে পড়ে। তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তারপর এই ঘটনা ঘটল। মামুন বলেন, আমি তাকে নানাভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার রিটন কুমার সাহা বলেন, “নিথরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফ্যানের সঙ্গে ঝলসে যাওয়া ওড়নার অংশ বিশেষভাবে দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে সবকিছুই আত্মহনন বলে মনে হচ্ছে। তিনি তিনি বলেন, “অসম বিয়ের কারণে সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনের অসহযোগিতা আত্মহননের কারণ হতে পারে।” পুলিশের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আমরা আশা করছি সঠিক কারণ জানা যাবে। শীঘ্রই জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, তাদের সম্পর্ক যে এতো তাড়াতাড়ি নিঃশেষ হয়ে যাবে সেটা মানুষ কখনো ভাবতেও পারেনি। সুখেই দিন কাটাচ্ছিল তারা। কিন্তু কোনো কারনতো অবশ্যই আছে যেটা তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।