বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোঘ্য কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা অপরিসীম। আর বাংলার মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে অসম্ভবভাবে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার এক বক্তব্যে বলেছেন মানুষের কষ্ট লাঘবে যা করা দরকার সরকার তাই করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক খাতে যে সংকট চলছে তা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে কী অবস্থা, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জনগণের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বে সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থান, অর্থনৈতিক সূচকের উত্থান-পতন এবং কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে সরকার ব্যবস্থা নেয়।
জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ সাম্প্রতিক সমস্যায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করতে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ নং বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব আনেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি।
আলোচনার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বিরোধী দলের এমন একটি প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুজিবুল হকের আনা প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতীয় পরিষদ।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা মানেই দেশের মানুষের সেবা করা। লুটপাট, দুর্নীতি, নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন নয়।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা বিপদে আছি। শুধু আমরা নই, উন্নত দেশগুলোও বিপদে মত্ত হয়ে উঠছে। জার্মানি বলেছে কেউ গরম পানি ব্যবহার করতে পারবে না। ব্রিটেনে পরিস্থিতি আরও খারাপ। শীতে কী করবেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা। কারণ তখন পানি গরম না করলে তারা বাঁচতে পারবে না।
তিনি বলেন, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। আমি যে উপলব্ধি. আমি নিজেও এখন সব বাতি জ্বালাই না। আমরা সেখানে অর্থ সঞ্চয় করি। আমি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনেক কাজ করি। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। মানব কল্যাণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়। মানুষ যখন কষ্ট পায়, আমি অন্তত ব্যথা অনুভব করি। কারণ আমার বাবা এদেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার ওপর ডলারের অবরোধসহ বিভিন্ন কারণে বাজারে ডলারের সংকট উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কিছু মানুষ মানুষের দুর্ভাগ্য থেকে নিজেদের ভাগ্য তৈরি করতে চায়। বেশি মুনাফা অর্জন করতে চান। তবে আমরা কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছি।
জ্বালানি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বলছেন কিছুই হয়নি। আসলে কিছু মানুষ আছে যারা কান দিয়ে শোনে না, চোখে দেখে না। যার জন্য কিছুই হয়নি। কিছুই ঘটেনি. প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে।
সরকার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি চিন্তা করেই প্রকল্প হাতে নেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে সব প্রকল্প হাতে নিই তাতে অর্থনীতির গতিশীলতার দিকে নজর রাখি। আসুন প্রথমে আমাদের রিটার্ন আসবে এমন প্রকল্পটি দেখি। আমি একটি বিশাল অফার পেয়েছি এবং এটি থেকে একটি বড় কমিশন নিয়েছি তাই আমি প্রকল্পটি নিয়েছি – আমরা তা করি না। কিন্তু তা করা হয়েছে জিয়ার আমলে। জেনারেল এরশাদের আমলে এটা করা হয়েছিল। এটা করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার আমলে। আমাদের কাছে এরকম অনেক প্রমাণ আছে। আমরা এখানে দুর্নীতি করতে আসিনি। আমরা দেশের জন্য করি।
সরকারপ্রধান বলেন, গত ৬০ দিনে পদ্মা সেতুর টোল থেকে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সব বিবেচনায় জ্বালানি তেল ও সারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম সামান্য কমেছে, পাঁচ টাকা। যুদ্ধ শুরুর পরপরই দাম বাড়ানো হলে দাম আরও অনেক বাড়াতে হতো। এটা মানুষের কথা মাথায় রেখে করা হয়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠিত হয়, তখন রাজনীতি ও অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই নাজুক অবস্থা ছিল। করোনার কারণে বিশ্ব মন্দার সময় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাচ্ছে। যখন প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ফিরে আসতে শুরু করে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশকেই সংকটে পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ডাল চিনিসহ অনেক কিছু আমদানি করতে হয়। একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে এখন আগের তুলনায় $৯ বিলিয়ন বেশি খরচ হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে যা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। নিজেদের নিষিদ্ধ করে আমরা এখন বিপদে পড়েছি। ইউরো জোনের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাপানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি আগে সেখানে লাল ছিল। ইউরোপে গ্যাস, বিদ্যুৎ এমনকি পানিও রেশন করা হচ্ছে। জাপান, চীনে লোডশেডিং হচ্ছে।
রিজার্ভ নিয়ে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে বৈদেশিক রিজার্ভ ঝুঁকিমুক্ত বলে বিবেচিত হয়। পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য দেশটির মজুদ রয়েছে। এখানে চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা সময়মতো সমস্ত ঋণ পরিশোধ করি। আমরা কখনো খেলাপি ছিলাম না, হবেও না।
তিনি বলেন, তেলের দাম নিয়ে কথা হচ্ছে। ২০২১ সালে ডিজেলের গড় দাম ব্যারেল প্রতি ৮৩.৯৩ ডলার। এখন ১৩২.৫৩ ডলার। এটা তার চেয়ে বেশি ছিল। ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। বড় হারে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আমি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। আমি টিএসপিকে ৩৭ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। চিনির চাহিদা ২ মিলিয়ন টন। উৎপাদন খুবই কম। চাহিদার ৯৬ শতাংশ আমদানি করতে হয়। মসুর ডালেরও একই অবস্থা। ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মসুর ডালের দাম ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। চাল গমের আটার দাম বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা নিজেরা গবেষণা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা পর্যালোচনা করার কোনও ব্যবস্থা নেই। আপনার নিজের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট একেবারেরই সহ্য করতে পারেন না তাই তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য সরকার সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পিতার স্বপ্নগুলো তিনি এক এক করে বাস্তবায়ন করছেন।