বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে অন্যতম আওয়ামীলীগ। এই দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আওয়ামীলীগ দলের সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের পথ চলা। এমনকি তিনি এই ক্ষমতাসীন দলের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি এই রাজনীতিবীদ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আজ তার মৃ/ত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামীলীগ দলের অনেক নেতাকর্মী তাকে স্মরন করেছেন। এদিকে তাকে স্মরন করে বেহস কিছু কথা জানালেন মাহবুবউল আলম হানিফ।
ওয়ান ইলেভেনের কঠিন দু:সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তখন আর্দশের পরীক্ষায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। ভয় এবং লোভের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছেন অনেকে। যখন প্রিয় নেত্রীর গ্রে/প্তা/রে হতবিহ্বল কর্মীরা। হতাশা, বিভক্তি আর অজানা আশঙ্কায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। এসময় সৈয়দ আশরাফ শেখ হাসিনার পক্ষে এক অনবদ্য অবস্থান নেন। দলকে টেনে তোলেন খাদের কিনারা থেকে। সৈয়দ আশরাফ দলের বাইরেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। এমন স্বল্পভাষী, মিষ্টভাষী, পরিমিতিবোধসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান মানুষ রাজনীতিতে বিরল। দেশ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার প্রতি সৈয়দ আশরাফের কমিটমেন্ট ছিল সব কিছুর উর্ধ্বে। কর্মীদেরকে উনার মত করে ধারণ করতে খুব কম নেতাই পেরেছেন। দলের ভেতরে বাইরে কাউকেই তিনি ব্যক্তিগত আ/ক্র/মণ বা আ/ঘা/ত করে কথা বলেননি। আদর্শিক রাজনীতিতে পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে পথ হাঁটা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঈর্ষণীয় ইমেজের পর অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। কত নেতার কত রকম দৌড়-ঝাঁপ! নানা রকম কায়দা-কৌশলে বিভিন্ন মিডিয়ায় সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত করার জন্য প্রচারণা চালানো হলো। কিন্তু যাঁকে সরানোর জন্য এত কিছু, সেই মানুষটি নির্বিকার। বরাবরের মতোই নির্বিকার। কাউকে কিছু বলেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতার জন্য যখন তাঁর নাম ঘোষিত হলো, মিতভাষী এই জ্ঞানতাপস, মুক্তিযোদ্ধা এবং আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতির ঋষিপুরুষ ধীরস্থির পায়ে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর পক্ষে-বিপক্ষের লাখো জনতা পিনপতন নীরবতায় অপেক্ষমাণ। সবার চোখেমুখে একটাই প্রশ্ন-তিনি কী বলবেন? তিনি অত্যন্ত আবেগ জড়ানো কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম’।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম কাউন্সিলে আশরাফ ভাই বলেছিলেন, আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমার তখন ব্যথা লাগে। একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ব্যথা পেলে আমি ব্যথা পাই। আমার রক্ত আর আপনার রক্ত একই। রক্তে কোনো বিভেদ নাই’। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাই শুধু যেকোনো একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ কোন সনাতনী দলও নয়, আওয়ামী লীগ একটি ত্যাগের নাম, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম যে অনুভূতি ত্যাগের এবং আত্মত্যাগের।’ যেকোনো সংকট বা প্রোপাগান্ডার জবাবে কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে আশরাফ ভাই দ্রুত উনার বক্তব্য বা মতামত জানিয়ে দিতেন। তাঁর ঐ পদক্ষেপ গুলো ছিল কুটচালের বিরূদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব। উনার মতন এমন বিচক্ষণ হৃদয়বান নেতা বিরল। ক্ষমতার রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফ অনন্য এক ক্লাস। উনার চলে যাওয়ার তিন বছর হয়ে গেলো। যেকোনো সংকটে এখনো আমাদের আপার পাশে সৈয়দ আশরাফ ভাইকেই খুঁজে ফিরি। পরলোকে ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় নেতা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এবং তিনি ছাত্র জীবনেও আওয়ামীলীগ দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগ দলের হয়ে বাংলাদেশ সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন দফতরেও দায়িত্ব পালন করেছেন।